April 27, 2024, 4:30 am
সর্বশেষ:

শত কোটি টাকার ‘তক্ষক’ এর প্রাণ বাঁচালেন ওসি

  • Last update: Thursday, July 8, 2021

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ গত ০৬ জুলাই, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের তিতুরকান্দি গ্রামের জাহিদ শেখ এর হাতে ধরা পড়ে এই বিরল বন্য প্রজাতির প্রাণী ‘তক্ষক’। (যা বাংলাদেশ আইনে ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আলফাডাঙ্গা থানার এস.আই মোঃ কাদের শেখ তার আরো দুই অফিসার এ.এস.আই খায়রুল আলম ও এ.এস.আই অর্জুন বর তাদের ফোর্স সহ সেখানে উপস্থিত হলে অজ্ঞাতনামা লোকজন প্রাণীটিকে একটা কাপড়ের ব্যাগে রাখা অবস্থায় গাছে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। পুলিশ প্রাণীটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

খবর শুনে উৎসুক জনতার ভিড় জমতে থাকে থানায়। সংবাদ দেয়া হয় উপজেলা বন বিভাগীয় কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দদেরকে। সবার সম্মুখে নিজ হাতে অবমুক্ত করে দেন এই প্রাণীটিকে আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান।

এ ঘটনার বিবরণে অফিসার ইনচার্জ মোঃ ওয়াহিজ্জামান জানান, আমরা গভীর রাতে সংবাদ পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে প্রাণীটিকে উদ্ধার করেছিলাম; তবে এ পর্যন্ত কাউকেই আটক করা যায়নি বলে কারোর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়নি, এবং একটি একটি সাধারণ করা হয়েছে, যার স্মারক নং ২৬৪, তারিখঃ ০৮/০৭/২০২১।

কি এই ‘তক্ষক’?

প্রাণিটির নাম ‘তক্ষক’। দেখতে গুই সাপের বাচ্চার মতো। গায়ে লাল সিঁদুরের ও সাদা ফোঁটার মতো রয়েছে। আকারে ছোট। তবে ছোট হলেও অনেক বয়সী। পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে এই প্রাণি চড়ামূল্যে বিক্রি হয়। কারণ তক্ষকের ওষুধি গুণ রয়েছে বলে শোনা যায়।

এই প্রাণির দুই ধরনের পা রয়েছে। কোনটার ‘মুরগী পা’ আর কোনটার ‘হাঁস পা’। ‘হাঁস পা’গুলোর দাম খুব বেশি। সর্বনিন্ম সাড়ে ৯ ইঞ্চি লম্বা ও ৫২ গ্রাম ওজনের ‘হাস পা’ চলে। এর কম ওজন বা লম্বায় সাড়ে ৯ ইঞ্চির ছোট হলে চলবে না। ইঞ্চির মাপ ধরা হয় চোখ থেকে লেজের শেষ পর্যন্ত। ‘মুরগি পা’গুলো ২৫৫ গ্রাম ওজন ও সাড়ে ১৫ ইঞ্চি লম্বা হতে হবে। এ ছাড়া একটা আছে ‘বার্মিজ’। ‘বার্মিজটা’ ওজন সাড়ে তিনশ গ্রামের নিচে হলে বিক্রির অনুপযুক্ত।

এটি সরিসৃপ জাতীয় প্রাণি। এরা নিশাচর। গাছের গর্তে বাস করে। বিভিন্ন পোকামাকড়, পাখির ডিম খেয়ে এরা বেঁচে থাকে। ‘সাউথ ইস্ট এশিয়ায় অনেকেই পোষা প্রাণির মতো তক্ষক লালন করে বলে শোনা যায়। তারা মনে করেন, এই প্রাণি বাড়িতে থাকলে তাদের সৌভাগ্য বয়ে আনে। নিঃসন্তানদের সন্তানাদি হয়।’

এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘Gekko gecko’ ইংরেজিতে একে ‘Tokay gecko’ বলা হয়। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত কিছু কিছু দ্বীপাঞ্চলে এই প্রাণি রয়েছে।

উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, ভারত ও বাংলাদেশসহ মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কাম্পুচিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬০০ প্রজাতির তক্ষকের বাস।

বণ্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, তক্ষকের বিষয়টি আমরা এখনো পরিষ্কার হতে পারিনি। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জানা গেছে, পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে এই প্রাণি চড়ামূল্যে বিক্রি হয়। তক্ষকের ওষুধি গুণ রয়েছে বলে শোনা যায়। কোনো কোনো দেশে এ দিয়ে ওষুধ তৈরি করে থাকতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই প্রাণি বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দর-দাম হয় দুইভাবে। একটা থোক। আরেকটা স্ক্যান করে প্রাণির শরীরে থাকা ‘দানা’ হিসেব করে। তবে বেশির ভাগ বিক্রেতা স্ক্যানের বিপক্ষে। তারা থোক দরদাম করেন।

তক্ষক দিয়ে কী করা হয়- জানতে চাইলে কেউ কেউ বলেন, প্রাণিটা পুরো গলিয়ে ক্যান্সারসহ দূরারোগ্য ব্যাধির ওষুধ তৈরি করা হয়। এই প্রাণি কাউকে কামড় দেওয়ার পর তার ঘাঁ শুকিয়ে গেলে ওই ব্যক্তির শরীরে কোনো ধরনের রোগ-জীবাণু থাকবে না। আবার কেউ কেউ বলেন, এটার শরীরে থাকা দানা এক করে ড্রোন তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কেউ নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ
© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC