April 27, 2024, 12:20 am
সর্বশেষ:

বাংলাদেশে ৬ মাসে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা করছে ইউনিসেফ

  • Last update: Wednesday, June 24, 2020

করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত প্রায় ৪ লাখ ৫৯ হাজার মা ও শিশুর জীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে মনে করছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। মঙ্গলবার সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। ৬ মাসের মধ্যে সেখানে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। জন হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণার বরাত দিয়ে ইউনিসেফ এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশে করোনা রোধে যান চলাচল বন্ধ ও সংক্রমণের ভয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে না যাওয়াকে শিশুদের পুষ্টি বঞ্চনার অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে আরও বলা হয়েছে, এখানে চরম দরিদ্র পরিবারগুলো দিনে তিন বেলা খাবার জোগাতে পারছে না।

‘লাইভস আপএনডেড’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ইউনিসেফ বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিতে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দেয়, তা সত্ত্বেও লকডাউনের সময় পরিষেবা প্রাপ্তির সীমিত সুযোগ এবং অভিভাবকদের সংক্রমণের আশঙ্কার কারণে এপ্রিল মাসে কেবলমাত্র অর্ধেক শিশু তাদের নিয়মিত টিকা নিতে পেরেছে।

জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি ব্লুমবার্গ  স্কুল অব পাবলিক হেলথ কর্তৃক মে মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির পরোক্ষ কারণে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে আগামী ছয় মাসে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৮ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হতে পারে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমু হোজুমি বলেন, “কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর ক্রমবর্ধমান ক্ষতির প্রেক্ষাপটে শিশুদের ওপর এর প্রভাব ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের জীবন রক্ষাকারী টিকাদান কার্যক্রম এবং পুষ্টিজনিত সেবা অব্যাহত রাখতে হবে। যেহেতু বাবা-মায়েরা এসব সেবা অনুসন্ধান করে এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা প্রদান করে, তাই বাবা-মা স্বাস্থ্যকর্মী- উভয় শ্রেণিই যাতে নিরাপদে থাকে এবং নিরাপদ বোধ করে সেটাও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের স্কুলগুলোকেও যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদে পুনরায় চালু করতে হবে এবং শিশুদের জন্য হেল্পলাইনগুলোকেও আমাদের চালু রাখতে হবে। ইউনিসেফ এই সবক্ষেত্রেই সরকারকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।”

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশ; বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ এবং শ্রীলংকার শিশুদের বর্তমান অবস্থার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ইতোমধ্যে এসব দেশের ২৪ কোটি শিশু বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে বলে জানানো হয় সেখানে।

প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে এই অঞ্চলের ১২ কোটি শিশু আর্থিক সচ্ছলতা হারিয়ে দরিদ্র হয়ে পড়বে। দক্ষিণ এশিয়া একটি জনবহুল অঞ্চল। এখানে বসবাস করে পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ মানুষ। আর বিগত কয়েক সপ্তাহে এই অঞ্চলের নানা দেশে করোনার সংক্রমণ যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আঞ্চলিক বৃহৎ দেশ ভারতে সংক্রমিত এখন চার লাখ ৪০ হাজার।

এই অবস্থায় ‘পাল্টে যাওয়া জীবন: কীভাবে কোভিড-১৯ দক্ষিণ এশীয় ৬০ কোটি শিশুর ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ।

প্রতিবেদনের মূল বক্তব্যেই বলা হয়েছে, শিশু-কিশোরদের এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম একথা সত্য, কিন্তু তাদের জন্য সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হচ্ছে অর্থনৈতিক দৈন্য। সংক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টাকালে দেখা দেওয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয় শিশুর আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তন করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার সুযোগ থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশ; বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ এবং শ্রীলংকার শিশুদের বর্তমান অবস্থার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ইতোমধ্যে এসব দেশের ২৪ কোটি শিশু বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে বলে জানানো হয় সেখানে।

শুধু আর্থিক সঙ্গতি নয়, বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের সংজ্ঞা নির্ধারণে কোনও ব্যক্তির স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ না পাওয়া, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া, নিম্নমানের কাজ করতে বাধ্য হওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসে বাধ্য হওয়ার মতো নানাবিধ বঞ্চনা গণনা করা হয়।

বহুমাত্রিক এই দারিদ্র্যের তালিকায় চলমান মহামারির কারণে আরও ১২ কোটি শিশু যোগ হলে, দক্ষিণ এশিয়ায় মোট সংখ্যাটি উন্নীত হবে ৩৬ কোটিতে।

ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক প্রধান জিন গফ বলেন, ”এ অঞ্চলে চলমান মহামারি এবং সে কারণে চালু করা লকডাউন শিশুদের নানাদিক দিয়ে ক্ষতির শিকার করেছে। কিন্তু, অচলাবস্থার ফলে সৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক মন্দায় শিশুদের দুর্গতি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আগামীদিনের প্রজন্মের সম্পূর্ণ ভবিষ্যৎ এবং সমৃদ্ধির আশা হারিয়ে যেতে পারে।”

কোভিড-১৯ মহামারি দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশে শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করেছে। স্থগিত করেছে প্রচলিত রোগের টিকাদান কর্মসূচি। গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় আগামী মাসগুলোতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অভিভাবকদের হাতে শিশু নির্যাতন বৃদ্ধির তীব্র আশঙ্কাও করছে ইউনিসেফ প্রতিবেদন।

টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ থাকার কারণে নেপালে ইতোমধ্যে সাতবার হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলে জানায় জাতিসংঘের সংস্থাটি। যাতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে আড়াইশ’ শিশু। গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় এপ্রিল নাগাদ বাংলাদেশে ৫৫ শতাংশ নিয়মিত টিকাদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য দেওয়া হয়। এই অবস্থা শিশুদের অন্যান্য সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

প্রতিবেদনটি নানা প্রকার রোগ-ব্যাধি মোকাবিলায় শিশুর দেহে স্থায়ী সুরক্ষা গড়ে তোলা বা টিকাদান কর্মসূচির ব্যবস্থার বিপর্যয়, প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণের অভাব এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চনার দিকগুলো তুলে ধরে। ইতোমধ্যে ৪৩ কোটি শিশু বিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানানো হয়।

শিক্ষাদান নিশ্চিতে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের নানা দেশের সরকার ভার্চুয়াল পাঠদানের ব্যবস্থা নিলেও, ইন্টারনেট সংযোগের অভাব বা চলমান সঙ্কটে এ ধরনের সংযোগ বাবদ বাড়তি অর্থ ব্যয়ে অভিভাবকদের অপরাগতায় গ্রামীণ অঞ্চলে এ প্রক্রিয়ার সুফল খুব কম শিশুই পাচ্ছে। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক সংযোগের অভাব তো রয়েছেই।   

বিদ্যালয় কেন্দ্রিক সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় দেওয়া পুষ্টিকর খাদ্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। ভারত এবং নেপালের মতো কিছু দেশে হাজার হাজার বিদ্যালয়কে অস্থায়ী করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রেও রূপ দেওয়া হয়েছে। মহামারি শেষেও যা শিশুদের মাঝে সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। 

ইউনিসেফের আঞ্চলিক শিক্ষা উপদেষ্টা জিম একারস বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে আমাদের যত্নবান হতে হবে। শিশু-কিশোরেরা যেন শিক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিয়ে আগামী দিনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে গড়ে উঠতে পারে এবং স্থানীয় অর্থনীতি পুনঃগঠনে নাগরিক হিসেবে অবদান রাখতে পারে, তা নিশ্চিত করা উচিত সকলের। এর বিপরীতে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তাদের ভবিষ্যৎকে জলাঞ্জলি দেবে।

মহামারির মধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। বেতনভাতা কর্তনের শিকার হয়েছেন অনেকেই। দক্ষিণ এশিয়ার কিছু কিছু দেশের সরকার এসব কর্মী এবং তাদের পরিবারের সুরক্ষায় সামাজিক সুরক্ষার বলয় বাড়ালেও, তা যথেষ্ট নয় বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত নেওয়া পদক্ষেপগুলো পর্যাপ্ত নয়, এমনকি কিছু কিছু দেশে এ ধরনের কোনও উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC