May 8, 2024, 1:48 am
সর্বশেষ:
উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইউপি চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ সাতকানিয়ার রাজিয়া হত্যার প্রধান আসামী ফারুখ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার মৌলভীবাজার আদালত প্রাঙ্গণে “ন্যায়কুঞ্জ” উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসে বাঁশখালী লবন শ্রমিক কল্যান ইউনিয়নের আলোচনা সভা ও র‌্যালী আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসে বাঁশখালীতে রিক্সা শ্রমিকদের আলোচনা সভা ও র‌্যালী রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় সোনারগাঁয়ে বেপরোয়া মহিউদ্দিন পেপার মিলস, বিলিং ঘর ধসে পড়ে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি আলফাডাঙ্গায় বৃষ্টির আশায় ইসতিসকার নামাজ আদায় বান্দরবানের ট্রাস্ট ব্যাংকের পাশে আগুন,পুড়ে ছাই দোকান ও বসতঘর           শ্রীমঙ্গল মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে সম্পত্তি জবর দখলের অভিযোগ

ফাঁদে আটকা পড়া বাঘটি বেঁচে আছে মানুষের ভালোবাসায়

  • Last update: Thursday, January 26, 2023

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: খাঁচা বন্দি অবস্থায় মেছো বাঘটিকে উদ্ধার করা হয়। ফাঁদ পেতে আটক করে প্রায় তিন দিন খাঁচার মধ্যেই অভুক্ত অবস্থায় ছিল সেটি। যেকোনো সময় প্রাণে মারা পড়ার হাত থেকে রক্ষা মিলে। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ আটকের খবর পেয়ে মেছো বাঘটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এরপর চলছে প্রকৃতিতে সংকটাপন্ন এই প্রাণীটির সেবা যত্ন আদর ভালোবাসায়।

একসপ্তাহ ধরে এটি আছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারে অবস্থিত বিভাগীয় কার্যালয় বর্ষিজোড়া এলাকায়। সম্প্রতি এই মেছো বাঘটিকে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে। এখানেই সেটিকে খাবারসহ সেবা আদর যত্ন দেওয়া হচ্ছে। মানুষের ভালোবাসা পেয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীটি।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, জগন্নাথপুরের মোহাম্মদপুর সেরা গ্রামের মো. তোরণ মিয়ার বাড়ির কাছে লোহার বিশাল ফাঁদ পেতে মেছো বাঘটিকে আটক করা হয়। গত ১৫ জানুয়ারি মেছো বাঘটি ধরা পড়ে। সেদিন থেকে খাঁচার মধ্যে পরিত্যক্ত ও অভুক্ত অবস্থাতেই তিন দিন পড়ে ছিল।

১৭ জানুয়ারি বনবিভাগের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কর্মী বাগান মালি মো. জাকির হোসেন মেছো বাঘটি ধরা পড়ার খবর জানতে পারে। তিনি পরে এই তথ্যটি দিয়ে অবগত করে জানান বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়কে। এরপর ওই দিনই বিকেলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ারের নেতৃত্বে একটি দল জগন্নাথপুরে মোহাম্মদপুর সেরা গ্রামের ওই বাড়িতে ছুটে যায়। সেখানে তারা গ্রামের লোকজনকে বিভিন্ন রকমের মেছো বাঘ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেয় মেছো বাঘ মানুষের উপকার করে থাকে। মেছো বাঘা মারা যাবে না। তবে কিছুদিন থেকে মেছো বাঘ সাধারণত যে এলাকায় ধরা পড়ে, মানুষকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে সেই এলাকায় অবমুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু ধরা পড়া মেছো বাঘটি আহত হওয়ায় সেটিকে আর সে এলাকায় অবমুক্ত করা হয়নি। পরে এদিন (১৭ জানুয়ারি) রাতে খাঁচাসহ ওই মেছো বাঘটিকে উদ্ধার করে বিভাগীয় কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।

আসার পথে মেছো বাঘটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। মেছো বাঘটি অভুক্ত ছিল। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কার্যালয়ে নিয়ে আসার পর সেটিকে পানি, খাবারসহ প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হলে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে। মেছো বাঘটি ধরা পড়ার সময় খাঁচা ভাঙার চেষ্টা করে অনেকটা আহত হয়েছে। মুখের দিকে আঘাতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। পুরোপুরি সারিয়ে তুলতে সেটিকে সেবা-শুশ্রূষা ও চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া মেছো বাঘটি পুরুষ ও বড় আকারের।

বন্যপ্রাণী গবেষক সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, সারা বিশ্বেই মেছো বাঘ এখন একটি সংকটাপন্ন ও বিলুপ্ত প্রাণী। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থাগুলোর সংগঠন আইইউসিএন মেছো বাঘকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। প্রাণীটি বাংলাদেশেও বিপন্ন। প্রাকৃতিক জলাভূমি কমে যাওয়ার কারণে এদের জনসংখ্যা কমে আসছে। অথচ কোনো জলাভূমির আশপাশে মেছো বাঘ থাকলে সেখানে মাছের পরিমাণ বাড়ে। মেছো বাঘ বেশির ভাগ সময়ই মরা ও রোগাক্রান্ত মাছ খেয়ে জলাশয়ে মাছের রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।

বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার গতকাল বুধবার জানান, ‘আমরা বন বিভাগের একজনের মাধ্যমে মেছো বাঘ ধরা পড়ার খবর পাই। এরপর সেখানে গিয়ে একটি বাড়িতে খাঁচার মধ্যে মেছো বাঘটিকে আটক অবস্থায় পেয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে গ্রামের মানুষকে বোঝানো হয়েছে মেছো বাঘ মারা যাবে না। বাড়ির লোকজন বলেছে হাঁস-মোরগ খেয়ে ফেলে এর জন্য তারা ফাঁদ দিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘মেছো বাঘটিকে নিয়ে আসার সময় মাঝপথে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পানি খাওয়ানো হয়। কার্যালয়ে নিয়ে আসার পরও অনেক পানি খেয়েছে। তিন দিন অভুক্ত অবহেলায় ছিল। খাবার দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া মুখেও আঘাত পেয়েছে। ক্ষত হয়েছিল অনেকটা। তারও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন অনেকটাই ভালো হয়ে উঠেছে। এটিকে দেশি মোরগ খেতে দেওয়া হচ্ছে। সম্পূর্ণ সুস্থ হলেই এটিকে তার বসবাসযোগ্য উপযুক্ত স্থানে অবমুক্ত করা হবে।’
মির্জা মেহেদী সরোয়ার জানান, মাস দেড়েক ধরে বিভাগীয় কার্যালয়ে আরও একটি মেয়ে মেছো বাঘ আছে। ওটিকে রেডিও কলার পরানো হবে। রেডিও কলার পরানোর কারণে অবমুক্ত করার পর এটির আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করে সম্পূর্ণ রূপে তুলে ধরা যাবে।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ
© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC