May 3, 2024, 7:02 am
সর্বশেষ:
আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসে বাঁশখালী লবন শ্রমিক কল্যান ইউনিয়নের আলোচনা সভা ও র‌্যালী আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসে বাঁশখালীতে রিক্সা শ্রমিকদের আলোচনা সভা ও র‌্যালী রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় সোনারগাঁয়ে বেপরোয়া মহিউদ্দিন পেপার মিলস, বিলিং ঘর ধসে পড়ে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি আলফাডাঙ্গায় বৃষ্টির আশায় ইসতিসকার নামাজ আদায় বান্দরবানের ট্রাস্ট ব্যাংকের পাশে আগুন,পুড়ে ছাই দোকান ও বসতঘর           শ্রীমঙ্গল মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে সম্পত্তি জবর দখলের অভিযোগ বাজারে ধানের দাম কম, শ্রমিকের মজুরি বেশি সাতক্ষীরা তালা উপজেলার তরুণ প্রজন্ম অনলাইন জুয়ায় আসক্ত সাংবাদিকদের সাথে বান্দরবানে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর মতবিনিময় সভা

দুই ওসির কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় নারী পুলিশের স্বামীকে ‘শিবিরকর্মী’ সাজানোর অভিযোগ

  • Last update: Thursday, March 25, 2021

দুই ওসির কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় এক নারী পুলিশ পরিদর্শকের স্বামীকে ‘শিবিরকর্মী’ সাজিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া পূর্বের আক্রোশ মেটাতে এক এসআই দ্বারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্বামীকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন ওই নারী পুলিশ পরিদর্শক।

বুধবার (২৪ মার্চ) বিকেলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনারের কাছে লিখিতভাবে দুই ওসি ও এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগটি করেছেন ওই নারী পরিদর্শক।

অভিযোগ ওঠা দুই ওসি হলেন- আরএমপির বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ এবং দামকুড়া থানায় কর্মরত ওসি মাহবুব আলম।

জানা গেছে, দামকুড়া থানার ওসি মাহবুব আলম ওই নারী পরিদর্শকের সাবেক স্বামী। ২০১৮ সালে ওসি মাহবুবের সাথে তার বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা আরেকটি বিয়ে করেন। ওসি মাহবুবও পরে পুলিশে কর্মরত আরেক নারীকে বিয়ে করেন।

অভিযোগকারী নারী পুলিশ পরিদর্শক বর্তমানে রাজশাহীর চারঘাটে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্তিতে কর্মরত আছেন। তার মূল কর্মস্থল ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সারদা পুলিশ একাডেমিতে দায়িত্ব শেষে আবার ঢাকা সিআইডিতে ফিরে যাবেন।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ‘২০১৩ সালে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব আলমের সাথে আমার বিয়ে হয়। শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আমি নিরুপায় হয়ে ২০১৮ সালে মাহবুব আলমের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাই। এরপর থেকে মাহবুব আলম আমাকে তার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য বিভিন্নভাবে বিরক্ত করে। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানার ললিতাহার এলাকার আব্দুল ওদুদের ছেলে মাহবুব হুসাইনের সঙ্গে আমার বিয়ে হয় এবং আমি সুখে শান্তিতে বসবাস করছি।’

অভিযোগে উল্লেখ বলা হয়, ‘রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ রাজশাহীতে যোগদান করার পর আমার সাথে পরিচয় হলে আমি তাকে কথা প্রসঙ্গে আমার বিষয়টা জানাই। এরপর থেকে নিবারণ চন্দ্র বর্মণ আমাকে বিভিন্ন সময় বিরক্ত করতে থাকেন। আমি বিষয়টি না বোঝার ভান করে তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।

পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব আলম বোয়ালিয়া থানার ওসি (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ মাহবুব আলমের বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাকে মাঝে মাঝে ফোন করতেন এবং বলতেন ‘একই শহরে অন্য ছেলেকে বিয়ে করে তুমি কি সংসার করতে পারবা? তুমি তো বিপদে পড়ে যাবা।’

এছাড়া পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব আলমও আমার বর্তমান স্বামী মাহবুব হুসাইনকে মতিহার থানায় ডেকে নিয়ে বিভিন্ন হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে বিয়ে করে তুমি ভালো থাকতে পারবে না। ওর সাথে মিশে তুমি আমার সাথে শত্রুতা তৈরি করো না।’

অভিযোগে ওই নারী আরও লিখেছেন, ‘গত ১৬ মার্চ রাত দেড়টার সময় আমার স্বামী মাহবুব হুসাইন আমাকে ফোন করে বলেন বাসায় পুলিশ এসেছে। আমি আমার স্বামীর ফোন থেকে বোয়ালিয়া থানার ওসি (তদন্ত) লতিফের সাথে কথা বলি। তারা তখন আমার শ্বশুর-শাশুড়ির বাসা থেকে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর আনুমানিক রাত ২টা ২০ মিনিটে পুনরায় এসে আমার স্বামীকে নিয়ে যায়।

আমি পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) লতিফকে ফোন করে বলি তুমি কি ওকে (মাহবুব হুসাইন) নিতে গেছো? লতিফ জানায় হ্যাঁ নিতে গিয়েছি।’ এরপর থেকে আমি অসংখ্যবার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ এনং ওসি (তদন্ত) লতিফকে ফোন করি এটা জানার জন্য যে, তারা আমার স্বামীকে কেন নিয়ে গেছে? কিন্তু আমি পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তারা আমার ফোন রিসিভি করেনি।

এরপর সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে আমি বোয়ালিয়া থানায় আসি। ডিউটি অফিসার এএসআই চাঁদ সুলতানা আমাকে জানায় যে, আমার স্বামীকে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে আসা হয়েছে রাত ২টা ৩০ মিনিটের পর। ওই সময় আমি ডিউটি অফিসারের সাথে এবং থানার অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পারি আমার স্বামীর নামে তাদের কাছে কোনো রাজনৈতিক তথ্য নেই।

আমি আমার স্বামীর সাথে দেখা করতে চাইলে ডিউটি অফিসার জানায় ওসি স্যারের নিষেধ আছে। সকাল অনুমানিক ৮টা ৩০ মিনিটে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় থানায় এসে হেসে আমাকে বলেন, ‘সেইতো দৌড়াইয়া আমার কাছে আসলা। কিন্তু সময়মতো আসো নাই, তখনতো আমাকে ভালো লাগে নাই।

এরপর তিনি বললেন, ‘তোমার স্বামী তো শিবির করে।’

আমি বললাম, না স্যার ও কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত না।’

তখন তিনি বললেন, ‘পুলিশ কমিশনার স্যারের কাছে তোমার কথা বলি, তিনি বললে তোমার স্বামীকে ছেড়ে দেব।’

আমি বললাম, স্যার আমি কি আপনার সাথে কমিশনার স্যারের কাছে যাব?’

নিবারণ স্যার বললেন, ‘না তোমার যেতে হবে না।’

তখন আমি ডিউটি অফিসারের রুমে অসহায়ের মতো বসে থাকলাম। এরপর আনুমানিক দুপুর একটার দিকে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ থানায় ফিরলেন। আমি পেছন পেছন তার অফিস রুমে ঢুকলাম।

তিনি বললেন, ‘তোমার স্বামীর নামে মামলা হবে।’

তখন আমি বললাম, ‘স্যার আমি কি আমার স্বামীর সাথে দেখা করতে পারব?’ তিনি অনুমতি দিলেন।

আমি আমার স্বামীর সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখি আমার স্বামীর মুখে হাতে আঘাতের চিহ্ন। আমি আমার স্বামীকে দেখে তার দুইটা মোবাইলের একটা ওসি স্যারের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে কোর্টে চলে আসি।

ওইদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আমার স্বামীসহ গ্রেফতারকৃত অন্যান্যদের কোর্ট নিয়ে আসে। তখন জানতে পারি আমার স্বামীর নামে সন্ত্রাস দমন আইনের মামলা দিয়েছে এবং তার নামের পাশে শিবিরকর্মী লিখে দিয়েছে। অথচ আমার স্বামী কোনোভাবেই জামাত-শিবিরে সাথে জড়িত না। মূলত আমার স্বামী কোনো রাজনৈতিক দলের সাথেই জড়িত নয়। কোনো দলীয় কমিটিতে আমার স্বামীর নাম কেউ দেখাতে পারবে না।

এরপর আমি জেলখানায় আমার স্বামীর সাথে দেখা করতে গেলে আমার স্বামী আমাকে জানান, বোয়ালিয়া থানার এসআই মতিনসহ ওই টিমে থাকা অন্যান্য সদস্যরা শুধু আমার স্বামীকে শারীরিক নির্যাতন করেছে।

এসআই মতিন আমার স্বামীকে বলেছে, ‘মাহবুব স্যারের বউকে বিয়ে করার শখ হয়েছে তোর। মাহাবুব স্যার তোর জীবন বরবাদ করে দেবে। তুই মনে রাখিস।’

ওই নারী পরিদর্শক আরও লিখেছেন, ‘আমার স্বামী রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয়। আমি আমার স্বামীকে নিয়ে সহজ স্বাভাবিক ও শান্তিময় জীবন-যাপন করছিলাম। ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ তার ব্যক্তিগত নোংরা উদ্দেশ্য আমার উপর প্রয়োগ করতে না পেরে এবং ওসি মাহবুব আলম আমার উপর পূর্ববর্তী আক্রোশ থেকে আমার জীবনটা ধ্বংস করে দেয়ার উদ্দেশ্যে আমার স্বামীকে মিথ্যা বানোয়াট মামলায় চালান দিয়েছে। আমি পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে যেন হেয় প্রতিপন্ন হই সেজন্যই এই ধরনের কাজ করেছে।

আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন নারী সদস্য। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশবশত আমার এবং আমার স্বামীর উপর এই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ এবং ওসি মাহবুব আলমসহ আমার স্বামীকে যারা থানায় শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিনীত আবেদন করছি।’

বিষয়টি নিয়ে ওসি মাহবুব আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই ধরনের ঘটনা সঠিক নয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। তারপর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। এরপর থেকে তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। সে আমাকে ফাঁসাতে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।

ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ওই নারীর সঙ্গে কোনো আপত্তিকর কথা হয়নি। তার স্বামীকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু স্বামীকে বাঁচাতে সে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, এ ধরনের একটি অভিযোগ আসার কথা শুনেছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, শুনেছি নারী পুলিশ পরিদর্শক আরএমপির দামকুড়া থানার ওসি মাহবুবের স্ত্রী ছিলেন। পরে ছাড়াছাড়ি হয়। অভিযোগ এলে অবশ্যই তদন্ত হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

উৎসঃ জাগো নিউজ

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC