প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভবিষ্যতে কেউ যাতে জীবন্ত পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করতে না পারে, সেজন্য অগ্নিসংযোগকারীসহ জঘন্য কর্মকা-ের মূল হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, “আমরা অগ্নিসংযোগকারী এবং তাদের হুকুমদাতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে কেউই জনগণকে পুড়িয়ে মারার মত জঘন্য কাজ আর করতে না পারে।” প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে কোটালীপাড়া উপজেলা চত্বরে কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে নির্বাচন পরবর্তী শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত অনেক ব্যক্তি ও তাদের কর্তাদের ইতিমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে এবং বাকিদের সর্বত্র থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে ধরা হবে। তিনি বলেন, “যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করেছে, তাদের কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। আমরা বর্তমানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং অন্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা অব্যাহত রাখব।” গণতন্ত্রের নামে বিএনপি-জামায়াত চক্র যা করেছে, তাঁর কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাদের আন্দোলন মানেই মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা এবং বাস-ট্রেনসহ যানবাহনে আগুন দেওয়া।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে আন্দোলনের নামে তারা ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যা করেছিল, এবারও একই কাজ করেছে। একজন মা তাঁর সন্তানকে বাঁচাতে বুকে আকড়ে ধরে ছিলেন, সেভাবেই ট্রেনে দেওয়া আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন, যে দৃশ্য সহ্য করা যায়না। তারা নাকি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে, কিন্তু সন্দেহ হয়- গণতন্ত্র বানানটা করতেই তারা জানে কি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন প্রতিহত করার আহবানে সাড়া না দিয়ে, স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে।
রেকর্ড পঞ্চমবার এবং টানা চতুর্থবার সরকার গঠনের পর, প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জে আসেন জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শনে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে। তিনি শনিবার রাত টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর নিজ বাড়িতে কাটিয়েছেন এবং আজ রাতে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২২২টি আসন পেয়ে ব্যাপক বিজয় লাভ করে।
কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবু ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ।
পঞ্চম ও টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি এবং শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আকরাম উদ্দিন আহমেদ, গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান ও গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রতিনিধি শহীদুল্লাহ খন্দকার।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি দেশে গণতান্ত্রিক সরকার বা রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতায় না থাকলে কোনো উন্নয়ন হয় না যদিও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল।
“কিন্তু দেশের জনগণ ভোট দিয়ে ষড়যন্ত্রের যোগ্য জবাব দিয়েছে,” বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণ ও গণতন্ত্রের বিজয়।
আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবারো ক্ষমতায় আনায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়া এবং কোটালীপাড়ার জনগণকে তাঁকে আবারও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় এবং তাঁর সমস্ত দায়িত্বভার নিজেদের কাঁধে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে পঞ্চম বারের মত প্রধানমন্ত্রী হবার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে তিনি সংসদের অন্যান্য সদস্যদের মতো তাঁর নির্বাচনী এলাকা দেখতে পারেন না কারণ তাকে সারা দেশের ৩শ’ আসনই দেখতে হয়, উন্নয়নের খেয়াল রাখতে হয়।
দেশবাসীর প্রত্যাশানুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এ সময় সকলের দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমার হারাবার কিছু নেই। আমার একটাই লক্ষ্য কতটুকু আমি দেশকে দিতে পারলাম।”
স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি যারা দেশের উন্নয়ন চায় না তারা এখনও সক্রিয় এবং ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে উল্লেখ করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
“সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, যার স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন,” বলেন তিনি।