করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) পরীক্ষার মেডিক্যাল সনদ নিয়ে আবারও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিশেষ ফ্লাইটে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়া কমপক্ষে সাতজনের ‘কভিড-১৯ পজিটিভ’ ধরা পড়ার পর ওই দেশটি বাংলাদেশিদের প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আজ সোমবার মধ্যরাত থেকেই ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। এর ফলে কূটনৈতিক ও জরুরি ব্যাবসায়িক কারণ ছাড়া বাংলাদেশি কেউ আপাতত দক্ষিণ কোরিয়ায় ঢুকতে পারবেন না। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট অবতরণের অনুমতিও দেবে না দক্ষিণ কোরিয়া।
সিউল থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, কভিড-১৯ ‘ইমপোর্টেড’ কেসের (অন্য দেশ থেকে আসা) সংখ্যা গত ১২ জুন ১৩-তে পৌঁছে। এরপর গত শুক্রবার তা পৌঁছে ১৭ জনে। এটি ওই দেশটিতে গত ৬৮ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ‘ইমপোর্টেড’ সংখ্যা।
বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, গত বৃহস্পতিবার বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়া ছয় বাংলাদেশি ও একজন কোরীয় নাগরিকের কভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ ছাড়ার সময় তাদের করোনার উপসর্গ ধরা পড়েনি। কভিড-১৯ পরীক্ষার ফলও ছিল ‘নেগেটিভ’।
এর আগে বাংলাদেশ থেকে বিশেষ ফ্লাইটে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়া ১২ জনের এবং জাপানে যাওয়া চারজনের কভিড-১৯ শনাক্ত হয়। তাদেরও কভিড-১৯-এর কোনো উপসর্গ ছিল না। দেশে পরীক্ষার ফলও ছিল ‘নেগেটিভ’।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল রবিবার গণমাধ্যমকে বলেন, টেস্ট ‘নেগেটিভ’ হওয়ার পর কেন ‘পজিটিভ’ হলো তা আমি জানি না। তিনি এ বিষয়ে যারা পরীক্ষা করেন তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
জানা গেছে, ওই দুটি দেশই কভিড-১৯ পরীক্ষার ফল নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন না তুললেও এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দেশ ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে তাদের কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি। এ ছাড়া এয়ারলাইনসগুলো যাত্রীদের সুস্থতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই বোর্ডিং পাস দিয়েছে। এর পরও কিভাবে তারা বাংলাদেশ ছাড়ার পর কভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক বলেন, আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে যে টেস্ট হয় তাতে ‘মার্জিন অব এরর’ ৩০% ধরা হয়। অর্থাৎ ১০০টি পরীক্ষার মধ্যে ৩০টি ভুল হতে পারে। বাংলাদেশে কভিড-১৯ উপসর্গ না থাকলেও বা কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ থাকলেও বিদেশে গিয়ে পজিটিভ ধরা পড়া ব্যক্তিরা সে ধরনের ভুলের কারণে শনাক্ত হয়েছেন এমনটি কেউ বলেনি। তিনি বলেন, করোনা মহামারি সব দেশের জন্যই চ্যালেঞ্জ। জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশিরা কিভাবে কভিড-১৯-এ সংক্রমিত হলেন তা জানা যায়নি। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে প্রবেশের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিও দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপে ভূমিকা রেখেছে। এর আগে জাপান এই অঞ্চলে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ ১১১টি দেশ থেকে যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। যা এখনো বহাল আছে। ঢাকায় জাপান দূতাবাস জানিয়েছে, ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণ মেডিক্যাল সনদ ভুল প্রমাণিত হওয়া নয়। ঢাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কভিড-১৯ পরীক্ষার ‘নেগেটিভ’ ফল নিয়ে দেশ ছাড়ার পর বিদেশে ‘পজিটিভ’ শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি তারা অবগত। বিশেষ ফ্লাইট আয়োজনকারী দূতাবাস ও এয়ারলাইনসগুলোর লোকজনই যাত্রীদের বোর্ডিং পাস দেওয়ার সময় তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন।
সম্প্রতি ঢাকা থেকে চীনের গুয়াংঝুগামী একটি ফ্লাইটে ১৭ জনের কভিড-১৯ শনাক্ত হয়। এরপর চীন কর্তৃপক্ষ তাদের বিধি অনুযায়ী চার সপ্তাহের জন্য চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের বাংলাদেশ-গুয়াংঝু রুটে ফ্লাইট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।