তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: দণ্ড প্রাপ্ত আসামির বয়স, স্বভাব-চরিত্র, অতীত কর্মকাণ্ড, শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, অপরাধের ধরন ও সাজা বিবেচনা করে তাকে প্রবেশনে পাঠাতে পারেন আদালত। তবে প্রবেশনে পাঠানো আসামিকে কিছু শর্ত সাপেক্ষে দেওয়া হয়। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে তাকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়। গত কয়েক বছর ধরে মৌলভীবাজারে কিছু মামলায় এ ধরনের রায়ের মাধ্যমে প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে বেশ কয়েকজন আসামিকে। বর্তমানে প্রবেশনে আছে মোট ২৩ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
ছোটখাটো অপরাধ কিংবা প্রথমবার দণ্ডিত আসামিকে ঘরে বসে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে বসবাস করে সাজা ভোগের বিধান থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তা প্রতিপালন হয়নি। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এ বিধানের প্রতিপালনে উদ্যোগ নেয়। এরপর থেকে প্রায়ই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আসামিকে প্রবেশনে পাঠানোর কথা শোনা যায়। দন্ডিত আসামিরা হলেন জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউপির সিরাজনগর গ্রামের মো. নুর মিয়া, শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউপির নোয়াগাঁও গ্রামের মোশারফ হোসেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউপির বৌলাশির গ্রামের কামাল মিয়া. জুড়ী উপজেলার বাছিরপুর গ্রামের কবির আহমদ, একই গ্রামের মুহিবুর রহমান, সদর উপজেলার তৈলোক্য বিজয় গ্রামের মো. জহিরুল হক, মল্লিকসরাই গ্রামের স্বপ্না বেগম, কুলাউড়া উপজেলার ভুইগাঁও গ্রামের চিনু মিয়া, কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি গ্রামের মো. মঈন উদ্দিন, সদর উপজেলার সুলতানপুর এলাকার সোমেনা বেগম, বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়া চা-বাগানের শ্রাবন্তী উড়িয়া, রাজনগর উপজেলার কামালপুর গ্রামের আলী আহমদ, কুলাউড়া উপজেলার কলিমাবাদ গ্রামের মো. আলী হোসেন, একই উপজেলার কৌলা গ্রামের মো. সালেক মিয়া, সদর উপজেলার বিন্নিগ্রামের মো.শামীম মিয়া, কুলাউড়া উপজেলা ক্লিভডন চা-বাগানের নিরলা উরাং, সদর উপজেলার কালকাপন গ্রামের অমর দেব, একই গ্রামের রুপন দেব, কমলগঞ্জ উপজেলার চতিয়া গ্রামের আব্দুস সালাম, একই উপজেলার কালেঙ্গা গ্রামের রুমন মিয়া, সদর উপজেলার মাতারকাপন গ্রামের তনজুর রহমান ওরফে প্রকাশ তনজু, একই উপজেলার সৈয়ারপুর গ্রামের হেলাল মিয়া এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার হৈবতপুর গ্রামের অবায়েদুল হক মামুন। তাদের সবাইকে এক বছরের জন্য ঘরে থেকে পরিবারের সাথে সাজা ভোগ করার রায় দিয়ে আদালত প্রবেশনে পাঠানো হয়।
জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ জানান, ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলায় প্রবেশনে পাঠানো হয় ৩৮ জন আসামিকে। এর মধ্যে ১৫ জন দণ্ডিত আসামি তাদের প্রবেশনকাল শেষ করেছে। বর্তমানে ২৩ জন প্রবেশনে রয়েছেন। তাদের কর্মকাণ্ড তদারকির দায়িত্ব ২০১৯ সাল থেকে তিনি পালন করে আসছেন।
প্রবেশন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালে ১০ জন, ২০২১ সালে ৫ জন, ২০২২ সালে ১৭ জন ও চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬ জনকে প্রবেশনে পাঠিয়েছেন আদালত। ইতোমধ্যে ১৫ জনের প্রবেশনকাল শেষ হয়েছে। বাকি ২৩ জন বর্তমানে প্রবেশনে আছেন।
মৌলভীবাজার জজ আদালতের আইনজীবী পংকজ সরকার বলেন, কোনো অপরাধ করে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে দণ্ডিত ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, অতীত কর্মকাণ্ড, আসামির বয়স ইত্যাদি বিবেচনায় এনে আদালত দণ্ডিত ব্যক্তিকে কারাগারে না রেখে শর্তসাপেক্ষে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ঘরে বসে সাজা ভোগে রাখতে পারেন বলে জানান তিনি।