বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতার জন্য যারা আবেদন করেছিলেন এবং প্রার্থী হয়েছিলেন তাদেরকে করোনা হেল্প সেন্টারের কর্মকাণ্ডের সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান।
এর আগে শনিবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্তগুলো জানানোর জন্য এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, শনিবার বিকেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় করোনাবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বর্তমান পরিস্থিতি এবং বিএনপি গৃহীত পদক্ষেপগুলো উপস্থাপন করেন। ৭০টি করোনা হেল্প সেন্টারে কাজ শুরু হওয়ায় সভায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যারা বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য আবেদন করেছিলেন এবং প্রার্থী হয়েছিলেন তাদেরকে করোনা হেল্প সেন্টারের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে। জেলা নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, করোনা টিকা দেয়ায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্ন হওয়া সত্ত্বেও সরকারের মন্ত্রী ও বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে জনগণকে ভয়াবহ বিভ্রান্তি ও হতাশার কবলে ফেলায় সভা থেকে নিন্দা জানানো হয়। সভা মনে করে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পরে প্রত্যাহার সরকারের সমন্বয়হীনতা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহ না করেই গণটিকার নামে গণপ্রতারণা শুরু করেছে। একই সাথে চরম অব্যবস্থাপনা ও দলীয়করণের কারণে এই লোক দেখানো টিকা অভিযান গণসংক্রমণ অভিযানে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে এই গণটিকার নামে একটা গণতামাশা শুরু করেছে। সরকারের হাতে টিকা এসেছে ১ কোটি ৬০ লাখ, অথচ শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে হলে প্রয়োজন হবে ২৬ কোটি টিকা। এছাড়া প্রথম ১ সপ্তাহে ১ কোটি টিকা প্রদানের কথা বলেছিল। কিন্তু এখন এক দিনে ৩০ লাখ টিকা দেয়ার জায়গায় তিন দিনে দেয়ার কথা বলছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপই প্রমাণিত হয়েছে টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো রোড ম্যাপ সরকার জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি। অন্য দিকে এই গণটিকা দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ দলীয় কর্মসূচিতে পরিণত করার উদ্দেশ্যে দলীয়কর্মীদের সম্পৃক্ত করায় সভা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং প্রতিবাদ করেছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় সমাজকর্মী, শিক্ষক, সামাজিক সংগঠন, জনপ্রতিনিধি ও এনজিওদের সম্পৃক্ত করলে এই ধরনের দলীয়করণের সম্ভাবনা কম থাকতো।
এ সময় তিনি আরো বলেন, সরকার টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে দলীয় বৈষম্য সৃষ্টির একটা অবৈধ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সকল প্রকার দলীয়করণের প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে সার্বজনীন টিকা দেয়ার কার্যকরী ব্যবস্থাগ্রহণের আহ্বান জানাই। অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ জনগণের সামনে উপস্থাপন করার জন্য সরকারের প্রতি আবারো আহ্বান জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সভায় ন্যূনতম সময়ে টিকা দেয়া জন্য দেশে টিকা উৎপাদনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে তা অবশ্যই হতে হবে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। সভায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির প্রায় ৫০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং অবিলম্বে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য হ্রাসে বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানানো হয় বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।