তুরস্ক, সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্র ইসারায়েলি হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমিরাতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী খালিফা শাহীন আল মারার ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ধর্ম পালনে বাঁধা দান মানবাধিকার বিরোধী কাজ। আহত মুসল্লিদের সুস্থতা কামনা করেন এই মিনিস্টার।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা উপেক্ষা করে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরের রাতে শনিবার (৮ মে) জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ঢল নামে। তারা সেখানে তারাবি ও ক্বদরের নামাজ আদায় করেন।
মুসল্লিরা দামেস্ক গেটে জড়ো হয়ে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ বসিতস্থাপনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ওপর হামলা চালায়। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্টের তথ্যমতে, দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৮০ ফিলিস্তিনি আহত হন। এদের মধ্যে এক বছর বয়সী এক শিশুসহ ১৪ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া বহু মানুষকে আটক করা হয়। ইসরায়েলের পুলিশ দাবি করেছে, তাদের এক কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
শুক্রবার জুমাতুল বিদায় লাখো মুসল্লি অংশ নেন। সেদিন ইসরায়েলি বাহিনী আল-আকসা মসজিদের ভেতরে ঢুকে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায়। এতে ২০৫ ফিলিস্তিনি আহত হন। হামলা উপেক্ষা করে লাইলাতুল ক্বদরের রাতে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি আল-আকসায় আসেন। অবশ্য তাদের ঠেকাতে ইসরায়েলি বাহিনী বাস আটকে দেয়। এরপর দীর্ঘ পথ হেঁটে তারা মসজিদে পৌঁছান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নামাজে আসা অনেক নারী আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। হামলা-সংঘর্ষের মধ্যেও ফিলিস্তিনিদের নামাজ আদায়ের ছবিও এসেছে অনেক গণমাধ্যমে।
এবার আল-আকসা কত সংখ্যক মুসল্লি উপস্থিত হয়েছিলেন, তার পরিসংখ্যান এখনো পাওয়া যায়নি। তবে গত রমজানে হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রজনী পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরে মসজিদটিতে ইবাদত-বন্দেগির জন্য অন্তত ৪ লাখ মুসল্লি জড়ো হয়েছিলেন। তারা রাতভর ইবাদত-বন্দেগি করেন। লাইলাতুল ক্বদরে পবিত্র আল-কুরআন নাজিল হয়। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রথম কিবলায় হাজির হয়ে নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত করবেন।
ওল্ডসিটি জেরুজালেমের দামেস্ক গেটে বিক্ষোভকারী মাহমুদ আল-মারবুয়া রয়টার্সকে বলেন, ‘তারা (ইসরায়েলি বাহিনী) চায় না আমরা আল-আকসায় নামাজ আদায় করি। এখানে প্রত্যেক দিন লড়াই-সংঘর্ষ হচ্ছে। প্রত্যেক দিন তারা সমস্যা তৈরি করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তরুণদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি করছে। এমনভাবে গুলি চালাচ্ছে যে, প্রাণে বেঁচে থাকাই দায়।’
এ হামলার প্রতিবাদে ইস্তাম্বুলে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেছে জনতা। তারা তুরস্ক ও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপন ও আল-আকসায় হামলার প্রতিবাদ জানান। জনতা স্লোগান দেন, ফিলিস্তিনিা এক নন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘মুসল্লিদের স্বাধীনতা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে তার দেশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে।’ তবে ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস অভিযোগ করেন, ‘তিনি (নেতানিয়াহু) যা বলছেন, তা ইসরায়েলের কলুষিত হামলা।’
আল-আকসা মসজিদ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যতম শ্রদ্ধার স্থান। এটি মুসলিমদের প্রথম কিবলা। এ ছাড়া ফিলিস্তিন তাদের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে ঘোষণা করে রেখেছে। অন্যদিকে আল-আকসা ইহুদিদের কাছেও একটি পবিত্র স্থান, যাকে তারা টেম্পল মাউন্ট হিসেবে জানেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে তেল আবিব থেকে ইসরায়েল তার রাজধানী জেরুজালেমে স্থানান্তর করে বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে।