প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জনগণের কাছে ন্যূনতম জবাবদিহিতাহীন, আমলাচালিত, ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট সরকারের কাছে এমন বাজেটই প্রত্যাশিত। এই বাজেট আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’
বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থান তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। এর আগে, গতকাল বুধবার বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদের সামনে বাজেটের কপি ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ করেন।
ফখরুল বলেন, ‘এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, এসএমই, গ্রামীণ অর্থনীতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবন-জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে। ফলে এদেশের জনগণের মাঝে সীমাহীন হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতাহীন একটি একদলীয় সরকারের আচরণে কাল্পনিক সাফল্যের দিবাস্বপ্ন দেখানোর অপপ্রয়াসই স্বাভাবিক।’
বিএনপির মহাসচিবের অভিযোগ, ‘এবারের বাজেট করোনার সময়ে বীভৎস স্বাস্থ্য সংকটে পড়া মানুষের নাভিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেওয়ার বাজেট। এই বাজেট করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া কোটি কোটি অনাহারী মানুষকে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ঠেলে দেওয়ার বাজেট। এই বাজেট কৃষিকে ধ্বংস করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলার বাজেট। এই বাজেট দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার না করে আরও গভীর মন্দায় ফেলে দেওয়ার বাজেট, এই বাজেট দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে ফেলার বাজেট।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকার বাংলাদেশকে একটি লুটেরা আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে। এ বাজেটে লুটপাটকারী, ধনিকশ্রেণি ও আমলাতন্ত্র-নির্ভর অর্থনৈতিক দর্শনের আলোকে প্রস্তুত হয়েছে এবং তাদেরই স্বার্থরক্ষা করা হয়েছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, ’আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, খসড়া বাজেট পেশের পর গত ১২ জুন আমরা বিএনপি’র পক্ষে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলাম। সে সময়ে আমরা বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত কর আরোপের বিষয়ে আমাদের অভিমত জানিয়েছিলাম। কিন্তু অর্থমন্ত্রী পাশকৃত বাজেটে সাধারণ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া এবং আমাদের সুপারিশের কোনও মূল্যায়ন করেনি। সরকারের বিগত বাজেটগুলোর মতো এ বাজেটেও লুটেরা সরকারের ধনিকশ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। এ বাজেট মানুষকে অসৎ হবার প্ররোচনা দেওয়ার বাজেট।
করোনা চিকিৎসার কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার বলেছিল কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে সে একজন সরকারি রোগী। ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রত্যেককে বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করা হবে। বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলোতে বিনামূল্যে পিসিআর পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে এ শর্তে যে তারা রোগীদের কাছ থেকে কোনও ফি নেবে না। অথচ সংক্রমণ যখন বৃদ্ধি পেল এমন এক মোক্ষম সময়ে এসে সরকার করোনা টেস্ট ফিস ২০০ ও ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। সরকার পরিচালনাধীন ল্যাবরেটরিতে এ জাতীয় ফি আদায় সারা বিশ্বেই বিরল। দক্ষিণ এশিয়ার কোনও দেশই সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে করোনা পরিক্ষার জন্য কোনও ফি নেয় না। এমনকি নেপালে সরকারিভাবে পরীক্ষার ব্যয় বহন করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিটি করোনা টেস্টের জন্য নেপাল সরকারই ৫৫০০ টাকা পরিশোধ করছে। অথচ আমাদের দেশে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা টেস্ট ব্যয় জন প্রতি ৩৫০০ টাকা; বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে ৪৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়। কি অমানবিক সরকার এটি তার একটি উদাহরণ মাত্র।’