এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ
দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ থাকার পর দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যতম সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) পুনরায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। গ্যাস সংকটের কারণে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ ছিল, ফলে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি টাকার সমমূল্যের ইউরিয়া সার উৎপাদন ব্যাহত হয়।
রবিবার (২ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ইউরিয়া উৎপাদন পুনরায় চালু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান।
সিইউএফএল সূত্রে জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেডিসিএল) গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে সার কারখানার উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯ অক্টোবর সকাল ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ আবার শুরু হয়। যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নিরাপত্তা যাচাই শেষে রবিবার রাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়।
এমডি মিজানুর রহমান বলেন, “গ্যাস সরবরাহ সচল হওয়ার পর সব যান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন চলছে। গ্যাসের সরবরাহ ঠিক থাকলে উৎপাদন অব্যাহত থাকবে।”
পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে সিইউএফএলের দৈনিক ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। গ্যাস সংকট ও যান্ত্রিক জটিলতার কারণে গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি মাত্র আড়াই লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে পেরেছিল, যা তাদের পূর্ণ সক্ষমতার তুলনায় অনেক কম।
বাংলাদেশে প্রতিবছর আনুমানিক ২৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে সিইউএফএলসহ বিসিআইসির অন্যান্য কারখানা মিলে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন করা সম্ভব হয়, বাকি ১৬ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করতে হয়।
১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় প্রতিষ্ঠা করা হয় সিইউএফএলকে। এটি দেশের প্রথম বৃহৎ গ্যাসনির্ভর ও আধুনিক ইউরিয়া সার কারখানা। প্রতিষ্ঠাকালে প্রতিদিন ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টনে। এছাড়া বছরে প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি উৎপাদন বজায় রাখতে সিইউএফএল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গ্যাস সংকটের কারণে সার উৎপাদন বন্ধ থাকায় সরকারকে উচ্চমূল্যে ইউরিয়া আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়েছিল। উৎপাদন শুরু হওয়ায় এই চাপ কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিইউএফএল সূত্র জানায়, পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন চালু থাকলে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি টাকার ইউরিয়া সার উৎপাদন সম্ভব হবে, যা স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখবে।
