তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: একটি পাতা দু’টি কুড়ি চায়ের দেশে চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। আকাশের নীল দিগন্ত ছোঁয়া অপরূপ প্রকৃতি। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। এর মাঝেই লাল টিনের চাল, চারিদিকে নেই কোনো বেড়া। যতদূর চোখ যায়, চারদিকে ছোট বড় সবুজ পাহাড়। বিভিন্ন জাতের রং বেরঙের ফুলের সমাহার মন কেড়ে নেয়। তার মাঝখানেই লাল সবুজের পতাকার মতো লাল বৃত্তের জায়গাটা পূরণ করেছে লাল টিনের গোলাকার বেড়াবিহীন একটি ঘর। এখানকার প্রকৃতি দেখে মনে হয় বান্দরবনের সাজেক।
সরেজমিন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া চা-বাগানের ১০ নম্বরে গিয়ে দেখা যায়, চায়ের সমাহারে উঁচু পাহাড়ের এক প্রান্তে কাঠ এবং লাল টিন দিয়ে তৈরি একটি ঘর। নীল আকাশের নিচে এ ঘরের মধ্যে বসে প্রকৃতির অপূর্ব রূপ দেখা যায়। পাহাড়ের মধ্যে লেক থাকায় জায়গাটির সৌন্দর্য্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
সেখান থেকে ছোট বড় সবুজ পাহাড় দেখতে বেশ ভালোই লাগে। স্নিগ্ধ হিমেল হাওয়া, পশ্চিমে রক্তিম আকাশ আর পাহাড়ের নির্মল সবুজ মিলেমিশে একাকার। পাহাড় থেকে ভেসে আসে নানান প্রজাতির পাখির কল-কাকলি। এ যেন এক স্বপ্নের দেশ! এই সৌন্দর্যের রাজ্যে না হারিয়ে উপায় নেই। এখানে কখন যে সময় গড়িয়ে যায়, তার হিসাব থাকে না। হিসাব রাখার দরকারও পড়ে না। প্রথমবার গিয়ে মনে হবে অনন্তকাল থাকা যাবে এমন পরিবেশে।
চা-বাগানের অপরূপ সৌন্দর্যের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। বাগানের ভেতর উঁচু টিলায় চাশ্রমিকদের চায়ের পাতা তুলতে দেখা যায়। আরও দেখা যায়, ঝরা পাতায় রাবার বাগানের অপরূপ দৃশ্য। রাস্তায় পাওয়া যায় বানরের দল। গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে লাফাচ্ছে। বানর (মা) তার ছোট বাচ্চাকে পিঠের ওপর বসিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়া মানুষকে দেখে ভয়ে পালিয়ে যায়। এ যেন সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার এক বাস্তব উদাহরণ।
সবুজের গালিচা বিছান চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমী যে কারও মনকে আন্দোলিত করবে। সবুজ চায়ের ঘ্রাণ মনটাকে প্রফুল্ল করে তুলবে। তখন মনের অজান্তেই গুনগুনিয়ে উঠবেন ‘ও পাহাড়িয়া মন, ও বাগানিয়া মন…।’
কথা হয় জেলা শহর থেকে ঘুরতে আসা সঞ্জিত দাসের সঙ্গে। তিনি জানান, ছুটি পেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে এসেছি এখানে। এখানকার দৃশ্য দেখে মনে হয় চায়ের দেশে এটি একটি ছোট্ট সাজেক। ঝুমঝুম বৃষ্টির সময় উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় বসে হিমেল হাওয়ায় এককাপ চা থাকলে আড্ডাটা বেশ ভালোই জমে উঠত।’
আরেক পর্যটক টিপু আহমেদ এর বাড়ি ঢাকার টঙ্গীতে সেই সুবাদে চাকরি করেন মৌলভীবাজারে। তিনি বলেন, যান্ত্রিক শহরে এমন মনোরম জায়গা পাওয়াই যায় না। ছোট-বড় সবুজ পাহাড় দেখতে বেশ ভালোই লাগে। এখানে এসে কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে, তাও যেতে মন চায় না। ভাবছি পরিবারকে নিয়ে একদিন চলে আসব।
পরিবেশপ্রেমী ও সাংবাদিক সহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘কালের বিবর্তনে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর স্থানগুলো। পাহাড়, টিলা, বন কেটে উজাড় করা হচ্ছে। এসব জায়গাকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের তৎপর হতে হবে। নিয়মিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করতে হবে।
ঘুরতে আসা মৌলভীবাজার আধুনিক ট্যুরিজম অ্যান্ড ট্রাভেলস এর ম্যানেজার আদিয়ান নোমান বলেন, ‘আমিও সময় পেলে প্রকৃতিকে ছুঁতে যাই। যদিও এটা কোনো পর্যটনকেন্দ্র না, তবুও জায়গাটা চোঁখে লাগার মতো। পুরো সপ্তাহ অফিসে কাজ করে এমন প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর পরিবেশে আসলে শারীরিক ভাবে সুস্থ-সুন্দর দেহ-মন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’