আজ ১৯ জুলাই ২০২৩ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, ‘’কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি রোধসহ ১০ দফা দাবি এবং আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে শীঘ্রই চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত ২২ জুলাইয়ের সমাবেশের অনুমতি প্রদান ও সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।‘’
১০ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে আগামী ২২ জুলাই শনিবার ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত সমাবেশের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরার লক্ষ্যে আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘’আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের অন্যতম বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দল। দেশের সকল এলাকায়, শহর ও গ্রামে সর্বত্র যার সাংগঠনিক অবস্থান রয়েছে। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রায় সব কয়টি জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীগণ নির্বাচিত হন (১৯৭৯ সালে ৬ জন, ১৯৮৬ সালে ১০ জন, ১৯৯১ সালে ২০ জন, ১৯৯৬ সালে আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ৩ জন, ২০০১ সালে ২১ জন ও ২০০৮ সালে ২ জন)। জামায়াতের দুই জন নেতা মন্ত্রী হিসাবে সততা ও নিষ্ঠা সহকারে দায়িত্ব পালন করে রেকর্ড তৈরী করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দুই টাকার দূর্নীতির অভিযোগও কেউ দাঁড় করাতে পারেনি। একটি দায়িত্ববান, গতিশীল, দেশপ্রেমী ও জনসেবী রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত সারাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। বিগত দেড় দশকেরও বেশী সময় ধরে ক্ষমতাসীন, ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের মানুষের বাক-ব্যক্তি ও অন্যান্য স্বাধীনতা হরণ করে নিয়েছে। জনগণের সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিং এর সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোট ও ভাতের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতের সকল কার্যক্রমের উপর অন্যায় ও বেআইনী নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ শাখা কার্যালয় সমূহ বন্ধ করে রেখেছে। কোথাও কোন প্রকাশ্য কার্যক্রম করতে গেলেই বাধা দেয়া হচ্ছে।‘’
তিনি বলেন, ‘’আপনারা জানেন বিগত ৫ই জুন জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা জনসমাবেশের অনুমতি চাইলেও অনুমতি দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে ১০ জুন শেষ মুহুর্তে অনুমতি পেয়ে জামায়াতে ইসলামী বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২২ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগরী সংগঠন ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে একটি সমাবেশের অনুমতি চেয়ে সি.এম.পি বরাবরে আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে। যারা ১৭ জুলাই আবার অনুমতির বিষয়ে জানতে কমিশনারের কার্যালয়ে যান।
অত্যন্ত দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের জানাতে হচ্ছে যে, কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই সি.এম.পি কমিশনার কার্যালয় আমাদের সমাবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও সহনশীল সংগঠন। আমরা চাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠিত হোক, আইনের শাসন কায়েম হোক, মানুষের ভোট-ভাত-বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরে পাক। আমরা সরকারের এ নেতিবাচক ভূমিকার প্রতিবাদ জানাই। প্রশাসনের এই আচরণ তাদের দলকানা ভাবমুর্তি তৈরী করছে, নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন করছে। আমরা মনে করি, সরকার আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরীতে ভূমিকা রাখবে, জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশের সুযোগ প্রদান করেই এই পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।‘’
তিনি আরো বলেন, ‘’দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ক’মাস বাকী। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরীর পরিবর্তে কর্তৃত্ববাদী সরকার রাজনৈতিক দলন-পীড়ন সমানেই চালিয়ে যাচ্ছে। সার্বিক দিক থেকে দেশ গভীর সংকটে নিপতিত। গুলশানে উপনির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীর উপর নগ্ন হামলা দলীয় সরকারের অধীনে তথাকথিত নিরপেক্ষ নির্বাচনের সর্বশেষ নমূনা। ১১টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ৩টি নির্বাচনই ছিল দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে গ্রহনযোগ্য। অতএব দেশ ও জাতিকে সংকট থেকে মুক্ত করতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের কোন বিকল্প নেই। ফ্যাসিবাদের কবল থেকে দেশকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পথে ফেরাতে সকল রাজনৈতিক দল এবং দেশ প্রেমিক জনগণকে বর্তমান সরকারের অপশাসন ও জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে দূর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।‘’
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ও নগর জামায়াতের নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, এফ এম ইউনুছ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান প্রমুখ।