
বাসুদেব বিশ্বাস , বান্দরবান : ২৫ জানুয়ারি (বুধবার) দুপুরে বান্দরবান পার্বত্য জেলার মেঘলাস্থ পর্যটন মোটেলে ‘ আমাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্যোগে প্রকল্পের অগ্রগতি ও অভিজ্ঞতা বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা। মাস্টার ট্রেইনার সুমিত বণিকের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্রাউস’র সংস্থার নির্বাহী পরিচালক চাই সিং মং। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের প্রজেক্ট ম্যানেজার সঞ্জয় মজুমদারের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা, অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ডনাই প্রু নেলী, প্রোগ্রেসিভের নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা, উইভের নির্বাহী পরিচালক নাই ইউ প্রু মেরী, টংগ্যার নির্বাহী পরিচালক প্রাণজিৎ দেওয়ান,তহ্জিংডং’র নির্বাহী পরিচালক চিং সিং প্রু, সিমাভি বাংলাদেশের লবি এন্ড এডভোকেসি অফিসার ইসহাক ফারুকী, রাঙামাটির মাস্টার ট্রেইনার রিমি চাকমা, খাগড়াছড়ির মাস্টার ট্রেইনার নবলেশ্বর দেওয়ান প্রমুখ।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও সিমাভি নেদারল্যান্ডসের কারিগরি সহযোগিতায় পরিচালিত প্রকল্প কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের মাস্টার ট্রেইনার সুমিত বণিক। তিনি তার উপস্থাপনায় প্রকল্পের চলমান গুরুত্বপূর্ণ কাজের বিবরণ উপস্থাপনার পাশাপাশি প্রকল্পের প্রত্যাশিত ফলাফল ও উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো সংক্ষেপে সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, প্রকল্পটি পার্বত্য অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ১০-২৫ বছর বয়সী কিশোরী ও যুব নারীদের জীবনে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি পার্বত্য জেলা পরিষদের চলমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহবান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা বলেন, ‘ কিশোরী ও যুব নারীদেরকে প্রজনন স্বাস্থ্যের সঠিক তথ্য জানার বিকল্প নেই। আমাদের সেবাকেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোতে সেবা নেয়ার মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। সেই সাথে আপনারা যারা প্রকল্পের সাথে যুক্ত আছেন, তাদেরকে আন্তরিকভাবে কাজের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, তথ্য প্রদান ও সহিংসতার শিকার হলে প্রতিকার পাওয়ার উপায়গুলো সঠিকভাবে জানাতে হবে। পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আমাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তবে আপনাদেরকে জেলা পর্যায়ে সকল ধরণের উন্নয়ন কর্মকান্ড বিষয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে সমন্বয় সাধন করার জন্য আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে। সবশেষে তিনি প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
সভার সভাপতি বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের প্রজেক্ট ম্যানেজার সঞ্জয় মজুমদার তার বক্তব্যে বলেন, ‘ আমরা ২০১৯ সাল থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে এই ৩ পার্বত্য জেলার ১২হাজার কিশোরী ও যুব নারীকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছি। প্রকল্পের নির্ধারিত বেশ কিছু সংখ্যাগত অর্জনও করতে পেরেছি। কিন্তু এই কাজের স্থায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের আন্তরিক সহযোগিতা। যার মাধ্যমে কিশোরী ও যুব নারীরা নানা ধরণের সেবাসমূহ পাবে, আর পার্বত্য অঞ্চলে এ কাজের বড় অভিভাবক হচ্ছে পার্বত্য জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের আন্তরিক সহযোগিতাই পারে কিশোরী ও যুব নারীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। কারণ ইতোমধ্যে কিশোরীদের মধ্যে সেবা গ্রহণের জন্য চাহিদা তৈরি হয়েছে। মাসিক সম্পর্কিত কুসংস্কার ভাঙ্গা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর মানসিকতা তৈরি হয়েছে। এই চলমান পরিবর্তনটাকে ইতিবাচকভাবে ও সম্মিলিতভাবে ধরে রাখতে হবে। সেজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অনুরোধও জানান।
আলোচনা সভায় স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মী, বিএনপিএস’র কর্মকর্তা, ৩ পার্বত্য জেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন সহযোগী ১০সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়কারী, লবি এন্ড এডভোকেসিবৃন্দ, কিশোরী, ক্লাবের মেন্টর সভায় উপস্থিত ছিলেন। শেষে প্রধান অতিথি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় এসআরএইচআর কনফারেন্স-২০২২ এ অংশগ্রহণকারী সংস্থাকে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন।