আবদুল্লাহ আল মামুন: সাতক্ষীরা জেলা ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের ১মাস পূর্ণ হল ২৬ জুন। আজও দুর্ভোগ কাটেনি সাতক্ষীরার আশাশুনির উপজেলার প্রতাপনগরের মানুষের। পানিতে ভাসছে ২৫ হাজারের অধিক মানুষ। এসব এলাকার মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে নৌকা ছাড়া উপায় নেই।
জানা যায়, গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন প্লাবিত হয়। অন্যসব এলাকার বেড়িবাঁধ বাধা সম্ভব হলেও প্রতাপরের দুটি পয়েন্টের বাঁধ আজও রক্ষিত। আশাশুনি উপজেলা সদর থেকে প্রতাপনগর ইউনিয়নে আসার প্রধান সড়কে ক্লোজার উঠার কারণে নৌকায় খেয়া পার হয়ে প্রতাপনগরে যেতে হয়। সড়ক নষ্ট হওয়া এবং এলাকা প্লাবিত হয়ে রাস্তা ডুবে থাকার কারণে ইউনিয়নের ২৫ হাজারের অধিক মানুষের চলাচলের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা।
প্রতাপনগরের তালতলা এলাকার মাসুম বিল্লাহ বলেন, চারিদিকে পানি আর পানি। আমরা নদীতে নাকি সাগরের মধ্যে বসবাস করছি কিছু বুঝতে পারছি না। একটি রাস্তা-ঘাট ভালো নেই। হেটে চলচল করা যায় না। রাস্তায়ও বুক সমান পানি সেজন্য নৌকায় করে চলাফেরা করতে হয়। বেদে সম্প্রদায়ের মতো নৌকায় বসবাস করতে হচ্ছে। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই।
প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়া এলাকার মিলন বিশ্বাস বলেন, গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে জোয়ারে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর তুফানের আঘাতে আঘাতে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ প্রতাপনগর অঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আজ পানি বন্দি অবস্থায় সীমাহীন দুর্ভোগ ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিশেষ করে রান্না খাওয়া, দৈনন্দিন প্রাকৃতিক কাজ, সর্বোপরি দুর্বিষহ জীবনের অন্ত নেই।
বর্তমানে প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ইয়াসের এক মাস পূর্ণ হল। এখানকার একটি রাস্তা-ঘাট ভালো নেই। ৬টি ওয়ার্ডের ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। প্রধান সড়কগুলো বড় বড় খালে পরিণত হয়েছে। প্রতাপনগর থেকে আশাশুনি সদরে যেতে হলে নৌকায় করে যেতে হয়। ভাটায় কিছুটা পানি সরলেও অনেক এলাকার পানি স্থায়ীভাবে থেকে গেছে। রাস্তায়ও চলাচলের কোন উপায় নেই। সে কারণে এখানকার মানুষের বাপ-দাদার আমলে ফিরে যেতে হয়েছে। আগে যেমন প্রতাপনগর থেকে আশাশুনি টাবুরি নৌকায় করে যেতে হতো। ইয়াসের পর থেকে আমাদের এই অবস্থা চলছে। এখানকার মানুষে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এখন নৌকা। এখন এখানকার মানুষের যাতায়তের একমাত্র মাধ্যম নৌকা অথবা ভেলা।
আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো: সোহাগ খান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আশাশুনি ১৪টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। অন্য সব বাঁধ মেরামত করা গেলেও প্রতাপনগরের হরিষখালি, বন্যতলা ক্লোজার দিয়ে এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। এলাকায় জোয়ার-ভাটা চলছে। ৫ থেকে ৬ হাজার পরিবার এখনও পানিবন্দি হয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলার ইট-খোয় দ্বারা নির্মিত ২.১০ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়ক সম্পূর্ণ ও আশংশিক ১৫কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিক মূল্যে ক্ষতি হয়েছে পাকা সড়কে ১.২৫ কোটি ও কাচা সড়কে ৩৬ লাখ টাকা। এসব এলাকার মানুষের চলাচলের সড়কগুলো নষ্ট হওয়ার ফলে তাদের এখন নৌকায় যাতায়ত করতে হচ্ছে। প্রতাপনগর বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে থাকার কারণে সড়ক মেরামতের কাজ সম্ভব হচ্ছে না।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে) রাশেদুর রহমান বলেন, প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়া পানি বন্ধ হয়ে গেছে। হরিষখালী বন্ধ করার পর নদীতে পানির চাপ থাকায় এবারও ভেঙে গেছে। দুই একদিনের মধ্যে আবারও বাঁধ বেধে ফেলবো। বন্যতলা পয়েন্টে জাইকার অর্থয়নে ঠিকাদাররা কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত সকল বাঁধের কাজ শেষ হবে এবং প্রতাপনগরের মানুষ পানি মুক্ত হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, আমি সম্প্রতি এ জেলায় যোগদান করেছি। বিষয়টি অবগত হয়েছি। খুব দ্রুত ওই এলাকা পরিদর্শন করবো। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি মন্ত্রণালয়ের কথা বলে দ্রুত যেটা করণীয় সেটা করব।