তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের জুড়ীতে কন্টিনালায় কৃষকের উপকারার্থে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যাম শত শত কৃষকের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। সকল নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে একটি পক্ষ লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রির স্বার্থে তাদের ইচ্ছেমত রাবার ফুলায় আবার ছেড়ে দেয়। এতে কৃষককুল ক্ষতিগগ্রস্থ হলেও তাদের কিছু যায় আসে না। গত রবিবার হঠাৎ করে রাবার ড্যাম ছেড়ে দেয়ায় হাকালুকি হাওরের খালিক চেয়ারম্যানের জাওর, গাড়া খালের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের ৪/৫ শত একর জমির বোরো কাঁচা-পাকা ধান পানিতে তলিয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মতছিন আলী, জায়েদ আনোয়ার চৌধুরী, মুস্তাকিম আহমদ, চাঁন মিয়া, আতিকুর রহমান, ফটিক মিয়া, মাখন মিয়া, আব্দুল খালিক, সিরাজ মিয়া, বটুল মিয়া প্রমুখ অভিযোগ করেন- হাকালুকি হাওরে বিশেষ করে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে হাওর পারের সোনাপুর গ্রামে জুড়ী নদীর শাখা কন্টিনালায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। বোরো মৌসুমে কৃষকের বৃহত্তর স্বার্থে রাবার ফুলানো ও ছাড়ার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কৃষকের স্বার্থের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন খাল থেকে মাছ বিক্রির জন্য তাদের ইচ্ছেমত রাবার ফুলান এবং ছাড়েন। রাবার ড্যামের নিচে হাজী খাল থেকে ৩ বছর আগে শাহপুরের দিকে একটি খাল খনন করা হয়। এর পর থেকে উল্লেখিত এলাকার বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়।
সম্প্রতি এ এলাকার ধান রক্ষার্থে রোজার প্রথম দিকে উক্ত খালের মুখে এলাকার কৃষকরা বাঁধ দেন। কিন্তু গত রবিবার জায়ফরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজার হুকুমে আব্দুর রব গং হঠাৎ করে রাবার ড্যাম এক সাথে সম্পূর্ন ছেড়ে দেয়ায় পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙ্গে বিশাল এলাকার ধান তলিয়ে যায়, একি সাথে পানির তোড়ে চার পাঁচটি ঘর ভাঙনের মুখে। এলাকাবাসী আগেই বাঁধ না ছাড়ার জন্য বা ছাড়লেও ধীরে ধীরে ছাড়ার অনুরোধ করেছিলেন।
কৃষকরা জানান, উক্ত এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ গাড়া খালের মুখ গড়কুড়ি বিল এলাকা। কিন্তু বিলের ইজারাদাররা মাছ ধরার জন্য সেখানে বাঁধ দেয়ায় পানি বের হতে পারে না। গড়কুড়ি বিলের মুখ খনন ও নতুন খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণের দাবী জানানো হয়।
জায়ফরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা বলেন, উজানের বোরো ধান ও বাড়ীঘর রক্ষার্থে উপজেলা পরিষদের সভায় ইউএনও মহোদয়ের দেয়া নির্দেশে রাবার ড্যাম ছাড়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল আলম খান বলেন, এ বছর প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় একশত হেক্টর জমি বিল সংলগ্ন থাকার কারনে এসব জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এ বছর ও বৃষ্টির কারনে উজানের পানি নেমে এসব ধান তলিয়ে যেতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, রাবার ড্যামে পানি আটকানোর কারনে উজানের অনেক জমির বোরো তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় পানি নেমে যাওয়ার জন্য রাবার ড্যামের সুইচ সামান্য খোলে দেওয়া হয়েছে। যারা মাছ ধরে তারা বাঁধ দিয়ে রাখে। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে গড়কুড়ি বিলের নালা দিয়ে পানি চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।