জন্ম থেকেই অন্ধ। কিন্তু আটকে রাখা যায়নি তাকে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর ভালোবাসায় টেলিভিশন ও রেডিওতে ক্রিকেটের ধারাভাষ্য দেন তিনি। বলছি বিশ্বের একমাত্র অন্ধ ধারাভাষ্যকার ডিন ডু প্লেসির কথা। ধারাভাষ্যে সাধারণত খেলাটা দেখতে হয় এবং সে অনুযায়ী করতে হয় বিবরণের উপস্থাপন। তাই জানতে চাওয়া হয়েছিল না দেখে কী করে ধারাভাষ্য দেন তিনি।
যমুনা টিভিকে ডিন বলেন, সত্যি বলতে সবাই যতটা কঠিন ভাবে কাজটা ততটাও কঠিন নয়। স্ট্যাম্পের মাইক্রোফোন আমাকে খুব সাহায্য করে। যেমন ধরুন, বল ডেলিভারির সময় বোলারের মুখ দিয়ে যে শব্দ বের হয় তা শুনে আমি বলতে পারবো তিনি কে। যেমন জিমি অ্যান্ডারসন, ব্রড কিংবা বাংলাদেশের শাহাদাত, মাশরাফী- সবার আওয়াজই আলাদা।
বোলারদের আওয়াজ শুনে আলাদা করতে পারেন তিনি। তবে ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। ব্যাটসম্যান কী শট খেললেন- হুক, পুল নাকি কাট, কীভাবে বুঝবেন কিংবা কোনো ক্যাচ কি ধরা হয়েছে নাকি ড্রপ হলো? সেই রহস্যের উন্মোচনও করেছেন ডিন।
তিনি বললেন, ব্যাটসম্যান যখন সুইপ শট খেলে তখন অধিকাংশ সময়ই পিচের সাথে ব্যাটের ঘর্ষণ হয়। এছাড়াও পুল শট খেললে ব্যাটে যেমন শব্দ হয় তার চেয়ে ড্রাইভ শট খেলার মধ্যে পার্থক্য আছে।
ডিন ডু প্লেসি জানালেন ক্রিকেটের সাথে তার এই নিবিড় সম্পর্কের সূচনার কথা। তিনি বলেন, সেটি ছিল ১৯৯২ সাল। আমি তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় স্কুলে পড়ি। তখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছিল ভারত। সে সময় কপিল দেব, সিধুর মত তারকাদের মাঠে দেখতে হাজির হয়েছিল হাজার হাজার সমর্থক। রেডিওতে সেই খেলার ধারাভাষ্য শুনে ক্রিকেটের প্রতি জন্ম নেয় ভালো লাগা।
বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল ডিন ডু প্লেসি। যমুনা টিভিকে বলেন, ২০০০ সালে বাংলাদেশ যখন টেস্ট স্ট্যাটাস পায়, তখন থেকে আমি তাদের খোঁজ খবর রাখি। আমিনুলের সেঞ্চুরি এখনও মনে আছে আমার। এছাড়াও হাবিবুল বাশার, আশরাফুল, সাকিব, তামিম ও মোস্তাফিজের খেলা আমার ভালো লাগে। তবে বাংলাদেশিদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম।
অসাধ্য সাধন করা ডিনের আক্ষেপও আছে, আর তা হলো পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়া। বললেন, নিজেকে প্রমাণের জন্য আরও বেশি সুযোগ চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু সেটা পাইনি।
কেবল শব্দ শুনেই ভক্ত থেকে ধারাভাষ্যকার বনে যাওয়া ডিন ডু প্লেসি জানালেন, জীবনের সবচেয়ে প্রিয় কাজটা তিনি খুঁজে পেয়েছেন এবং করছেন। পরিকল্পনা আছে ভবিষ্যতে জিম্বাবুয়ে থেকে অন্যত্র কোথাও চলে যাওয়ার; সেটা অবশ্যই ক্রিকেট খেলা কোনো দেশে।
উৎসঃ যমুনা টেলিভিশন