বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুর্গা মণ্ডপখ্যাত বাগেরহাটের শিকদার বাড়িতে এ বছর ৫০১টি দেবদেবীর প্রতিমা নিয়ে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালে বাগেরহাটের শিকদার বাড়িতে ৮০১টি প্রতিমা তৈরি করে সবচেয়ে বড় দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছিলেন ব্যবসায়ী লিটন শিকদার। করোনা পরিস্থিতির জন্য পরবর্তী তিন বছর দুর্গোৎসবে বড় কোনো আয়োজন করা হয়নি এ মণ্ডপে। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলী যুগের পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে প্রতিমা তৈরি ও সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভাস্কর্য শিল্পীরা।
প্রতিমা তৈরির প্রধান ভাস্কর তপন মণ্ডল বলেন, সিকদার বাড়ি দুর্গাপূজার আয়োজক লিটন শিকদারের দিকনির্দেশনায় এবছর দূর্গামণ্ডপে হিন্দু পুরাণের চার যুগের বিভিন্ন কাহিনী অবলম্বনে ৫০১টি প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। পূজার সময় দর্শনাথীরা যাতে সহজে প্রতিমাগুলোকে দর্শন করতে পারে সে লক্ষ্যে সারিবদ্ধভাবে কয়েকটি লাইনে প্রতিমাগুলো রাখা হয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য দেব-দেবীর প্রতিমার ভিতর একটি প্রধান আকর্ষণ রাখা হয়। এ বছর মণ্ডপের প্রধান আকর্ষণ কুম্ভকর্ণের ৬৫ ফুটের ঘুমন্ত প্রতিমা, যার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ প্রতিমার কাঠামো তৈরি ও ভাস্কর্য সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন শুধু রং করার অপেক্ষা। আমরা পনেরো জন ভাস্কর-শিল্পী প্রতিমা তৈরি ও সাজ-সজ্জার কাজে নিয়েজিত রয়েছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই সকল কাজ সম্পন্ন হবে।
বাগেরহাটের কারাপাড়া এলাকা থেকে প্রতিমা তৈরি দেখতে আসা গোবিন্দ সাহা বলেন, করোনার আগে এই মন্ডপে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্ত গত তিন বছর করোনার কারণে জাঁকজমকভাবে পূজা হয়নি। এ বছর বড় করে পূজা হবে শুনে পরিবার নিয়ে ঠাকুর তৈরি দেখতে এসেছি। আশা করছি, এবারও এই মণ্ডপে পূর্বের মতো দেশ বিদেশ থেকে অনেক দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে।
গোপালগঞ্জ থেকে আসা সুকুমার বাবু বলেন, প্রায় প্রতিবছর আমরা শিকদার বাড়িতে মায়ের দর্শন পেতে আসি। গত কয়েকবছর বড় করে পূজো হয় না, এবছর অনেক প্রতিমা তৈরির খবর পেয়ে কৌতুহলবশত আগেই দেখতে চলে এসেছি। পূজা শুরু হলে পরিবার নিয়ে আবার আসবো।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটি বাগেরহাট এর সভাপতি নিলয় কুমার ভদ্র বলেন, অসংখ্য দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করে পূজার আয়োজন করা হয় বলে সিকদার বাড়ির দুর্গা মণ্ডপকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুর্গা মণ্ডপ বলা হয়। বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার অসংখ্য মানুষ এ মন্ডপে আসেন। আশা করছি আবারও সিকদার বাড়ি দুর্গা মণ্ডপে জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব পালিত হবে।
এবার দুর্গাপূজায় সিকদার বাড়িতে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে ৬৫ ফুট লম্বা কুম্ভকর্ণের ঘুমন্ত মূর্তি। করোনা মহামারী ছাপিয়ে ২০২২ সালে বাগেরহাট জেলায় ৬৬৩টি মণ্ডপে পূজা উদযাপিত হয়েছিলো। এবছর সেই সংখ্যা প্রায় ৭০০ থেকে ৭৫০ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।