পশ্চিমতীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে যেসব ফিলিস্তিনির ঘরবাড়ি ইসরাইলের বর্বর সেনাবাহিনী গুঁড়িয়ে দিয়েছে, সেসব পরিবারের পাঁচজনের মধ্যে চারজন শিশুই মনে করে বিশ্ব তাদের ‘পরিত্যাগ’ করেছে।
সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপের ওপর ভিত্তি করে এমন তথ্য জানায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।
সেভ দ্য চিলড্রেন এ জরিপ পরিচালনা করে।
সংস্থাটি জানায়, পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ ও সিলওয়ানে বসবাসরত ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির শঙ্কায় রয়েছে।
গত ১০ বছরে ইসরাইল ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে এমন ২১৭ ফিলিস্তিনি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে বেসরকারি সংস্থাটি।
এর মধ্যে ৮০ শতাংশ শিশুর অভিমত, বাবা-মা তাদের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম নয়। তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
জরিপে দেখা যায়, অধিকাংশ শিশুই চরম দুর্দশার মধ্যে নিমজ্জিত। তাদের মধ্যে হতাশা, ভয়, বিষণ্নতা ও উদ্বেগ কাজ করে।
ঘাসান নামে ১৫ বছর বয়সি এক শিশু সেভ দ্য চিলড্রেনকে বলে, বাড়ি ধ্বংস করে দেওয়ার সময় আমার বাবাকে ইসরাইলি সেনা এবং তাদের কুকুরগুলো আক্রমণ করেছে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। বিষয়টি আমি এখনও ভুলতে পারছি না।
‘এখনও আমি দুঃস্বপ্ন দেখি— বুলডোজার দিয়ে আমাদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এ বাড়ি ভাঙার শব্দ আমাকে এখনও কষ্ট দেয়’, যোগ করে ঘাসান।
সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে, ইসরাইল কর্তৃক বাড়ি ধ্বংসের কারণে গত ১২ বছরে প্রায় ছয় হাজার শিশু বাস্তুচ্যুস্ত হয়েছে।
বাড়ি ধ্বংসের ঘটনা বাড়ছেই
চলতি বছরের মার্চে জাতিসংঘের একটি সংস্থা সতর্ক করে বলেছিল— পশ্চিমতীরে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ধ্বংস বাড়িয়ে দিয়েছে।
ফিলিস্তিনের অঞ্চলগুলোতে মানবিক বিষয়গুলোর সমন্বয়ের জন্য জাতিসংঘের অফিস (ওসিএইচএ) থেকে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ধ্বংসের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
ইসরাইলি কমিটি এগেইন্টস হাউস ডেমোলিশনসের তথ্যমতে, ১৯৬৭ সাল থেকে পশ্চিমতীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ২৮ হাজার ফিলিস্তিনির ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে।
দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক জেসন লি বলেন, সেভ দ্য চিলড্রেন বিশ্বাস করে, ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ধ্বংসের কারণে গত ১২ বছরে কমপক্ষে ছয় হাজার শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা বিশ্বের জন্য ‘বেদনাদায়ক’ ও ‘সতর্কবার্তা’।
এক বিবৃতিতে লি বলেন, ফিলিস্তিনের ঘরবাড়ি ধ্বংস আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। একই সঙ্গে এমন কর্মকাণ্ড শিশুদের নিরাপদ বাড়িতে বসবাসের অধিকারের লঙ্ঘন এবং নিরাপদে স্কুলে যাওয়ার পথে অন্যতম বাধা। অধিকৃত অঞ্চলের বাসিন্দাদের বিশেষ করে শিশুদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ইসরাইলের।
যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলকে এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালানো থেকে বিরত রাখতে সক্ষম না হয়, তবে ফিলিস্তিনি শিশুদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।