নাইজেরিয়ার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হামলায় ৫৩ গ্রামবাসী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দেশটির জামফারা প্রদেশে বন্দুকধারীদের হামলায় মারা গেছেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নাইজেরিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার একদল বন্দুকধারী সন্ত্রাসী মোটর সাইকেলে করে জামফারা প্রদেশের জুরমি জেলার কাদাওয়া, কাওয়াতা, মাদুবা, গান্দাসামু, সাউলাওয়া ও আশকাওয়া গ্রামে হামলা করে।
এ সময় তারা গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে, মাঠে কৃষকদের আক্রমণ করে এবং অনেক গ্রামবাসীকে তাড়া করে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলের দিকে তাড়িয়ে দিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালায়।
নাইজেরিয়ার জামফারা পুলিশ বিভাগের মুখপাত্র মোহাম্মদ শিহু ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপিকে জানান, হামলায় এ পর্যন্ত ৫৩ জন মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং এ পর্যন্ত ১৪ জন আহত গ্রামবাসীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের ধরতে জামফারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন শিহু।
কাদাওয়া গ্রামের বাসিন্দা হারুন আব্দুলকরিম এএফপিকে বলেন, ‘ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর শুক্রবার আমরা ছয়টি গ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ২৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করে কবর দিয়েছি। শনিবার বাকিদের মরদেহ উদ্ধার ও কবরস্থ করা হয়েছে।’
মুসা আরজিকা নামের আরেক বাসিন্দা মুসা আরজিকা বলেন, ‘মরদেহগুলো কবর দেওয়ার সময়ও আমরা ভয়ে ভয়ে ছিলাম। আমাদের শঙ্কা ছিল, ফের ডাকাতরা আক্রমণ করতে পারে। কারণ, তারা গ্রামের পাশেই জঙ্গলে আস্তানা গেড়েছে।
এই হামলায় নিহতের প্রতি শোক জানিয়েছেন জামফারা রাজ্যের গভর্নর বেল্লো মাতাওয়ালে। হামলাকারীদের ‘খুনে ডাকাত’ হিসেবে উল্লেখ করে তাদের প্রতিহত করতে জনগণকে আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
নাইজেরিয়ার উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সম্প্রতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে সশস্ত্র হামলা, ডাকাতি ও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের মতো অপরাধ। যে কয়েকটি প্রদেশে এই অপরাধগুলো সবচেয়ে উচ্চমাত্রায় হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে জামফারা অন্যতম।
গত ডিসেম্বরে এই জামফারা প্রদেশেরই একটি স্কুল থেকে সাড়ে আটশ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশন (আইওএম) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ১০ বছরে সন্ত্রাসীদের হামলায় নাইজেরিয়ার উত্তরপশ্চিম ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৭ লাখ। এরমধ্যে শুধু জামফারা প্রদেশেই বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজারের বেশি।
সূত্র: এএফপি, আলজাজিরা