রেজিস্ট্রেশনের পর টিকা নেওয়ার বার্তা হাতে পেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে করোনা ভাইরাসের টিকা নিতে ছুটে আসছেন হাজার হাজার প্রবাসীকর্মী। নির্দিষ্ট সময়ে টিকাকেন্দ্রে উপস্থিত থাকলেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক প্রবাসী।
তারা বলছেন, টিকা নেওয়ার জন্য সকাল থেকে লাইনে দাঁড়ালেও টিকা নিতে পারবে কি না তার নিশ্চয়তা নেই। তাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন-দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তাকর্মীরা অর্থের বিনিময়ে দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তকর্মী বলেন, এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। অন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, এমন অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়া যাদের ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে এবং টিকা নেওয়া জরুরি, তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
পারভেজ আহমেদ নামে এক কুয়েত প্রবাসী দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘ভিসার মেয়াদ অল্পদিন থাকায় দ্রুত টিকা নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। রেজিস্ট্রেশন করে এসএমএস না পাওয়ায় কোনো সমস্যা হয়েছে কী না ‘আমাদের প্রবাসী’ অ্যাপে জানতে চেয়েছিলাম। পরে একজন সাহায্য করবে বলে এগিয়ে আসেন। পরে আজ সকালে ঢাকায় এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজের টিকাকেন্দ্র একজনের কাছে আমরা তিনজন দুই হাজার টাকা দিই। পরে কয়েক মিনিটের মধ্যে আমাদের কাছে টিকা নেওয়ার এসএমএস চলে আসে। পরে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা টিকা নিতে পারি।’
এদিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়- টিকা নেওয়ার জন্য হাজার হাজার প্রবাসী লাইন ধরে অপেক্ষা করছে। সেখানে টিকা নিতে এসেছেন সৌদি প্রবাসী মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘টিকা নেওয়ার এসএমএস পাওয়ার পর ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে আজ ভোরে এসে উপস্থিত হই টিকাকেন্দ্রে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে এখনো টিকা দিতে পারিনি। এখানকার নিরাপত্তায় থাকা কয়েকজন এসে বলছে-কিছু টাকা দিলে দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা দিবে। আবার কেউ বলছে টিকা শেষ হয়ে গেছে। অথচ আমাদেরকে আজকে টিকা নেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছে।’
এসএমএস পাওয়ার পর ফেনী থেকে একই কেন্দ্রে টিকা নিতে আসেন সৌদি প্রবাসী আনোয়ার হোসেন। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে টিকা না পেয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সৌদি পৌঁছে ১৪ দিনের আইসোলেশনে থাকার।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘লাইনে দাঁড়িয়ে কী করবো? তারা বলতেছে টিকা শেষ হয়ে গেছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম টিকা নিবো না। সৌদি গিয়ে ১৪ দিনের আইসোলেশনে থাকবো। এখন হোটেল বুকিং দিয়ে বাড়ি ফিরে যাবো।’ অনেকেই টিকা নিতে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন।
টিকা গ্রহীতাদের এমন অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা যাদের ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে, টিকা নেওয়া জরুরি তাদেরকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এছাড়া আমরা প্রতিদিন ১ হাজার প্রবাসীকে টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সেটা ১ হাজার ছাড়িয়ে ১২শ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে। দেখা গেছে, এখন দেড় হাজার থেকে দুই হাজারের মতো লোক এসে ভিড় করছে। এখন নির্ধারিতদের ছাড়া বাকিদেরকে আমরা কীভাবে টিকা দিবো। এমনি আমরা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছি। আর অর্থের বিনিময়ে দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে-এমন অভিযোগ আসলে কিংবা প্রমাণ পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকের কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘টিকাকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী রয়েছে। কোনো অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। অনিয়মের কোনো অভিযোগ আসলে আমরা দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নিবো। যারা অনিয়মের কথা বলছেন, যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে ধরিয়ে দিন আমরা ব্যবস্থা নিবো।
উৎসঃ ইত্তেফাক