ভালো চাকরির প্রলোভন দিয়ে তিন নারীকে দুবাইয়ে পাচারের চেষ্টাকালে তিনজনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রোববার রাতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন আজিজুল হক (৫৬), মোছলেম উদ্দিন ওরফে রফিক (৫০) ও কাউছার (৪৫)।
র্যাব জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের মূল হোতা দুবাইয়ে অবস্থানরত চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন (৩৭) ও শিল্পী (৩৫)। তাদের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ থেকে কমবয়সি ও সুন্দরী নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন দেশে পাচার করছিল চক্রের দেশে অবস্থান করা সদস্যরা। তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮০ নারীকে পাচার করেছে। তাদের মধ্যে বেশি পাচার হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এছাড়া সৌদি আরব ও ওমানেও বেশকিছু নারীকে পাচার করা হয়েছে। ভালো চাকরির কথা বলে নারীদের বিদেশে পাঠানো হলেও তাদেরকে মূলত বিক্রি করে দেওয়া হতো। পরে জোরপূর্বক ডিজে পার্টি, দেহব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হয়।
সোমবার উত্তরায় র্যাব-১-এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন, র্যাব-১-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন। তিনি বলেন, চক্রের টার্গেট দরিদ্র মানুষ। বিদেশে চাকরির প্রলোভন দিয়ে সহজসরল মানুষকে ফাঁদে ফেলে অন্ধকার জগতে নিয়ে যাচ্ছে তারা। চক্রের পাতা জালে জড়িয়ে অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন অনেকে। তাদের অধিকাংশই নারী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ পর্যন্ত র্যাব-১ আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের অসংখ্য সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে র্যাব। সম্প্রতি রাজধানীসহ বেশকিছু এলাকায় মানব পাচারকারী চক্রের তথ্য পাওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে র্যাব-১-এর একটি আভিযানিক দল বিমানবন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের সক্রিয় তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে তিনটি পাসপোর্ট, তিনটি মোবাইল ফোনসেট ও ২৭ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। এছাড়াও তিনজন নারী ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। র্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, দুবাইয়ে অবস্থানরত চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন ও শিল্পীর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে মানব পাচার হচ্ছিল। মহিউদ্দিনের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেছে। নোয়াখালীর নূর নবী ওরফে রানা (৩৫) ও ঢাকার মনজুর হোসেন (৩৩) এই চক্রের দেশীয় হোতা। তারা পলাতক রয়েছে। নারীসহ চক্রের একাধিক সদস্য পাচারের কাজ করে। গ্রেফতার আজিজুল হক এই চক্রের অন্যতম সমন্বয়ক। আজিজুলের মাধ্যমে দুবাইয়ে অবস্থানরত মহিউদ্দিন ভিকটিমদের বিদেশে যাওয়ার খরচের টাকা পাঠাত। চক্রের নারী সদস্য তাহমিনা বেগম (৪৮) ও গ্রেফতার রফিক ও কাউছার কমবয়সি ও সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করত। এরপর বিভিন্ন কোম্পানি ও গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে বিদেশে পাঠাতে প্রলুব্ধ করত। কেউ বিদেশে যেতে রাজি না হলে বিভিন্নভাবে হুমকি দিত তারা।
বিদেশে পাঠাতে নারীদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হতো না-জানতে চাইলে র্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, নারীদের লোভনীয় ও আকর্ষণীয় পেশায় চাকরির কথা বলা হলেও তাদেরকে বিদেশে বিক্রি করে দেওয়া হতো। চক্রটি বিদেশে যেতে ইচ্ছুক নারীদের কাছ থেকে টাকা না নিয়ে উলটো টাকা দিত। এভাবেই বিশ্বাস অর্জন করত চক্রটি।