প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, কপ২৬ সম্মেলনে ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণা গৃহীত হওয়া বাংলাদেশের জলবায়ুু কূটনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের ফলাফল। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের নেতৃত্বে সবচেয়ে বেশি ৪৮টি জলবায়ুু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের দ্বারা ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণা গৃহীত হওয়া জলবায়ু কূটনীতিতে আমাদের দেশের অগ্রণী ভূমিকার ফল।’ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে তাঁর ১৪ দিনের সরকারি সফর সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করার উদ্দেশ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কপ২৬-এর প্রধান কৃতিত্ব হল বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা প্যারিস চুক্তি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-র সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দসহ জলবায়ু তহবিল প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন।
বাংলাদেশসহ ১৪১টি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে সকল ধরনের অরণ্য নিধন রোধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে তাঁকে কপ২৬-এর পাঁচজন চুক্তি প্রস্তুুতকারীর একজন হিসাবে নির্বাচিত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একে আমি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন আমাদের নৈতিক পররাষ্ট্র নীতির প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা হিসেবে বিবেচনা করে সম্মানিত বোধ করি।’ তাঁর সফরের বিস্তারিত অবহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে তাঁর দুই সপ্তাহের সফর এবং স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কপ২৬ শেষে গত ১৪ নভেম্বর সকালে তিনি দেশে ফিরেছেন।
তিনি জানান, এবারের সফরের বিভিন্ন পর্যায়ে সিভিএফ-এর থিমেটিক অ্যাম্বাসেডর মিজ সায়মা ওয়াজেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। এছাড়া, ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদলও তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কপ-২৬ সম্মেলনের মূল অংশ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলন এবং সাইড ইভেন্ট মিলিয়ে দুই দিনে তিনি ৬টি বহুপাক্ষিক সভা ও ৫টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন।
তিনি বলেন, কোভিড-পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থায় ৪৮টি দেশের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম-সিভিএফ-এর বর্তমান সভাপতি হিসেবে কপ-২৬ শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণ বাংলাদেশ এবং সিভিএফ সদস্য দেশগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সম্মেলনের প্রথম দিন ১ নভেম্বর তিনি সিভিএফ-এর চেয়ার হিসেবে ‘বাংলাদেশ ও কমনওয়েলথের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সিভিএফ-কমনওয়েলথ হাই-লেভেল প্যানেল ডিসকার্সন’এ তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করে কমনওয়েলথ ও সিভিএফ-এর মধ্যে কার্যকর অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পরামর্শ প্রদান করেন। ঐদিন দুপুরে তিনি কপ-২৬-এর মূল অনুষ্ঠান ‘বিশ্ব নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলন’ এ বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও দাবি-দাওয়া তুলে ধরে তিনি বক্তব্য প্রদান করেন। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের দায় মাত্র ০.৪৭ শতাংশেরও কম হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বলে তিনি তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন।
এছাড়া, তিনি সম্প্রতি ইউএনএফসিসিসি’র কাছে হালনাগাদকৃত ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) প্রদান, মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্লান এন্ড বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয় অবহিত করেন। পাশাপাশি, সিভিএফ-এর সভাপতি হিসেবে তিনি ক্লাইমেট ইমারজেন্সি প্যাক্ট গঠনের প্রয়াসের কথা বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরেন। বিশ্ব নেতৃত্বকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দফা প্রস্তান উত্থাপনের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রস্তাবগুলো হচ্ছে: প্রধান প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশসমূহকে উচ্চাভিলাষী এসডিসি প্রণয়ন, উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য ৫০:৫০ অনুপাতে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুত অর্থায়ন নিশ্চিত করা, পরিবেশবান্ধব উন্নত প্রযুক্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, ক্ষয় ক্ষতিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে একযোগে কাজ করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা।