ওমরাহ পালন থেকে সৌদি আরব নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলেও নির্দিষ্ট চারটি কোম্পানির টিকা গ্রহণসহ বেশ কিছু কঠিন শর্ত দিয়েছে। এ কারণে ওমরাহ পালন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের হজ এজেন্সিগুলোর মালিকরা। তবে দুই-চার দিনের মধ্যে চারজনের একটি ওমরাহ পালনকারী দল সৌদি আরব যাচ্ছেন। তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পরবর্তী সময় বেশিসংখ্যক ওমরাহ যাত্রী পাঠানোর উদ্যোগ নেবে এজেন্সিগুলো।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালনে আগ্রহীদের জন্য ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসন টিকা বাধ্যতামূলক করেছে সৌদি সরকার। কিন্তু বাংলাদেশে এখন চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের টিকাই বেশি দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় সিনোফার্মের টিকা যেন সৌদি সরকার অনুমোদন দেয়, সে জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে হাব। অথবা ওমরাহ যাত্রীদের ওই চার কোম্পানির টিকার যে কোনো একটি দেওয়ার ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন এজেন্সি মালিকরা।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন বিদেশিদের ওমরাহ পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল সৌদি আরব। সম্প্রতি তা প্রত্যাহার করে দেশটি। ফলে ১০ আগস্ট থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে গিয়ে ওমরাহ পালনের সুযোগ মিলছে। তবে বাংলাদেশ থেকে এখনো ওমরাহ করতে কেউ সৌদি আরবে যেতে পারেননি। একটি এজেন্সির মালিক আমাদের সময়কে বলেন, এবার সৌদি এয়ারলাইন্স ওমরাহের যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তা গতবারের চেয়ে মাথাপিছু প্রায় ২৮-৩০ হাজার টাকা বেশি। গতবার যেখানে উড়োজাহাজ ভাড়া ছিল ৫২-৫৩ হাজার টাকা, সেখানে এবার প্রায় ৮০ হাজার টাকা ঘোষণা করেছে সৌদি এয়ারলাইন্স। সৌদিতে অন্যান্য বছর হোটেলে এক রুমে চারজন থাকতে পারলেও এবার দুজন থাকতে পারবেন। ফলে খরচ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। তিনি আরও জানান, এবার একেক কোম্পানি একেক রেট দিচ্ছে। আমরা এখনো তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে পারিনি। ফলে এখনো ওমরাহ পালনে আগ্রহীদের সৌদি পাঠাতে পারিনি। তবে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে পাঠাতে পারব বলে আশা করছি।
হাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- ওমরাহ যাত্রীদের খরচের অর্থ সৌদি আরবে ‘আইবিএএন’-এর মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ওমরাহ যাত্রী ফ্লাইটে ওঠার আগে পিসিআর টেস্ট করোনা পজিটিভ হলে যেন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং টিকিট ও হোটেল পুনরায় বুকিং করা যায় সে বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ওমরাহ যাত্রীদের জন্য বর্তমানে সৌদি এয়ারলাইন্স ও বিমানের প্রকাশিত ভাড়া অনেক বেশি। বিমান ভাড়া কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
সৌদি আরবে নিযুক্ত কাউন্সেলর (হজ) জহিরুল ইসলাম বলেন, সবাইকে অবশ্যই সৌদি সরকারের নির্ধারিত ভ্যাকসিন নিতে হবে। সিনোফার্মের টিকার বিষয়ে সৌদি সরকার শিগগির হয়তো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেবে।
জানতে চাইলে হাবের সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, আমরা দুই-তিন দিনের মধ্যে ওমরাহ পালনের জন্য চারজনের একটি দল পাঠাব। তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আগামী মাস থেকেই বেশিসংখ্যক ওমরাহ যাত্রী পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ধর্ম সচিব নুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ বিমান ভাড়া বাড়ানোর কারণে সৌদি এয়ারলাইন্সও ভাড়া বাড়িয়েছে। আমরা বিমান প্রতিমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি উদ্যোগ নেওয়ার আশ^াস দিয়েছেন। আশা করছি বিমান মন্ত্রণালয় ভাড়া কমানোর উদ্যোগ নেবে। তিনি আরও বলেন, ওমরাহ যাত্রীদের জন্য সিনোফার্মের টিকা যেন সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয় সেই চেষ্টা চলছে। আশা করা যায়, খুব দ্রুত তারা ইতিবাচক একটা সিদ্ধান্ত জানাবে।