মো. রাসেল ইসলাম,যশোর জেলা প্রতিনিধি: যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ার সাতমাইল গবাদি পশুরহাটটি এখন জমজমাট হয়ে উঠেছে। এখানে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ গবাদি পশুর পাশাপাশি ছাগল বেচা-কেনা হয়ে থাকে।
আর কয়েকদিন পর মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব “পবিত্র ঈদুল আযহা”। এই ঈদের একটি উল্লেখ যোগ্য অংশ হচ্ছে পশু কোরবানী করা এ উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা(যাদের সামর্থ্য আছে) একমাত্র তারাই গবাদি পশু অথবা ছাগল কোরবানী’র মাধ্যমে আল্লাহপাকের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে থাকেন।
দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় শার্শা উপজেলার সাতমাইল বাজার গবাদি পশুর হাটটি পশু কেনা-বেচায় বেশ সমাদৃত। দেশের বিভিন্ন জেলা- উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে যেমন ক্রেতা আসেন এখানে গরু কিংবা ছাগল কিনতে,তেমনি গরু ব্যবসায়ী কিংবা খামারিরাও আসেন বিক্রয় করতে।
গরু ক্রয় এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতা কিংবা বিক্রেতার মাঝে যে ঘনত্বের সৃষ্টি হচ্ছে, তা করোনা মোকাবিলায় একটি বড় ধরনের ব্যাত্যয় ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে। একটি গরু বেচা-কেনায় কেবল যে ক্রেতা- বিক্রেতা থাকেন তা কিন্তু নয়। একটি মোটা তাজা গরুকে হাটে আনতে হলে তার সাথে আরও ৫ থেকে ৬ জন লোক গরুর দেখভালের জন্য এসে থাকেন।
দেশীয় গবাদি’র পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত হতেও আসছে গবাদি পশু। কোন রকম করোনা ফিটনেস ছাড়া এ সকল গবাদি পশু ঢুকছে লাগামহীন এই পশু হাটটিতে। ফলে অবস্থাটি কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। হাট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও তা সঠিকভাবে মানছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা।
হাট ইজারাদার আব্দুল খালেক বলেন,হাট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মাস্ক বিতরণ করা হলেও অনেকে মাস্ক ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে সামাজিক দুরত্ব মানছেন না,এ ব্যাপারে মাইকিং করা হলেও স্বাস্থ্য বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন করছেন।
হাট ইজারা কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক বাগআঁচড়া ইউপি সদস্য আসাদুল ইসলাম বলেন, ঈদের কারনে এমনটি হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। করোনার বিভিন্ন বিধি-নিষেধ তারা মাইকিং করে সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে,যাদের মাস্ক নাই তাদেরকে ডেকে মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন। এমন একটি ঝুকিপূর্ণ সময় ভারতীয় গরু প্রবেশে হাট কর্তৃপক্ষ কি ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে,তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, চোরাইপথে কোন ভারতীয় গরু হাটে উঠলে তা সাথে সাথে আমরা প্রশাসন কে জানিয়ে দিচ্ছি,প্রশাসন এর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
শনিবার(৫ জুন) দুপুরের দিকে রুটিন মোতাবেক ৭ মাইল বাজারের এই পশুর হাটটিতে পরিদর্শনে আসেন শার্শা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মীর আলিফ রেজা।
এ সময় তার সাথে অংশ নেন পুলিশের এএসপি, জুয়েল ইমরান(নাভারণ সার্কেল) যশোর,শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) বদরুল আলম খান,বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত ফাড়ির ইনচার্জ ফরিদ উদ্দিন সহ থানা-ফাড়ির পুলিশ কনেষ্টবলগণ।
এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা বলেন,মহামারি করোনা মোকাবিলায় সরকারের দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি বাস্তবায়নে উপজেলার পক্ষ থেকে করোনা সম্পর্কিত বিধি-নিষেধ পালনে প্রচার মাইকিং এর মাধ্যমে জনসাধরণকে সচেতন করা হচ্ছে। সেই মোতাবেক,৭ মাইলের এই পশুর হাটেও হাট কর্তৃপক্ষ কে বিভিন্ন সতর্কীকরণ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে,ব্যর্থতায় পরিণত হলে বর্তমান ইজারা দারদের ইজারা বাতিল হতে পারে বলে তিনি জানান।
অত্র পশুরহাটে স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, আমি যতটুকু জেনেছি ঐ গবাদি পশু’র হাটটিতে স্বাস্থ্য বিধি পরিপূর্ণভাবে পালনে বর্তমান ইজারা কমিটি ব্যর্থ্যতার পরিচয় দিয়েছে। দুর-দুরান্ত থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য নেওয়া হয়নি কোন স্বাস্থ্য বিধি ব্যবস্থা,হাট এলাকা জুড়ে চলছে অর্থ বানিজ্যের রমরমা ব্যবসা,করোনা মোকাবিলায় তাদের নেই কোন সতর্কাবস্তা।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী জেলা সাতক্ষীরায় চলছে লকডাউন। এমতাবস্থায় গরুর হাটের কারনে এতদাঞ্চলে যে কোন সময় করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ফলে, হাট নিয়ে বিধি-ব্যবস্থা চালু করার জন্য তিনি প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।