পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছিল, এখন বাজারে সেই উত্তাপ নেই। চালসহ রোজার ইফতারির প্রয়োজনীয় খেজুর, ছোলাসহ অন্তত ৯ ধরনের পণ্যের দাম কমেছে। তবে ছোট দানার মসুর ডাল, রসুন, শুকনো মরিচ ও এলাচের দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার শুরুতেই ক্রেতারা অতিরিক্ত পণ্য কিনে রেখেছেন। যে কারণে শুক্রবার (১ মে) বাজার ছিল কিছুটা শান্ত। ক্রেতাদের মধ্যে পণ্য কেনার প্রতি আগ্রহ কম থাকায় এ সপ্তাহে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বাড়েনি বলে জানান বিক্রেতারা।
এদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে চালসহ ৯ ধরনের পণ্যের দাম কমেছে। আর পাঁচ ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে বাকি পণ্যগুলোর দাম আগের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত দু’দিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ১৫ টাকা। রোজাকেন্দ্রিক বিক্রির পর চাহিদা কমায় পেঁয়াজের দাম কমেছে বলে মনে করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, রোজা সামনে রেখে গত সপ্তাহে পেঁয়াজের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ কারণে দামও বেড়ে যায়। ৪০ টাকার পেঁয়াজের কেজি ৬৫ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। তবে চাহিদা কমায় এখন আবার পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকায় নেমেছে।
এদিকে টিসিবির হিসাবে, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ১০ টাকা। গত সপ্তাহে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা দরে। ৯৫ টাকা লিটার সয়াবিন তেল ৯২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত শুক্রবার ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া খেজুর আজ বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করে। ৮৫ টাকা কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকায়। ৮৫ টাকা লিটার পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৩ টাকা।
টিসিবি’র হিসাবে আদার দাম কমেছে কেজিতে ১০০ টাকা। গত সপ্তাহে আমদানি করা যে আদা ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, আজ শুক্রবার সেই আদা বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে যে দেশি আদার দাম ছিল কেজি ২২০ টাকা, সেই আদা আজ বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ১৫০ টাকা করে। বাজারে চালের দামও কমে এসেছে। বিক্রেতারা বলছেন, নতুন চাল ওঠায় বাজারে চালের দাম কমে এসেছে। গত সপ্তাহে নাজির ও মিনিকেট চালের দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। শুক্রবার সেই চালের দাম কমে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, ৫৫ টাকা কেজি পাইজাম ও লতা বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকায়।
রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এসব পণ্যের দাম কমার প্রতিবেদন তৈরি করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, রোজার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে পেঁয়াজের। এই পণ্যটির দাম ১৩ শতাংশের ওপরে কমেছে।
রাজধানীর শাজাহানপুর, মালিবাগ, বাদামতলী, সূত্রাপুর, শ্যামবাজার, কচুক্ষেত, মহাখালী, উত্তরা আজমপুর, রহমতগঞ্জ, রামপুরা, মিরপুর-১ ও কাওরান বাজার থেকে পণ্যের দামের তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় রোজায় অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম কমেছে। এরমধ্যে দেশি পেঁয়াজের দাম ১৩ দশমিক শূন্য চার শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, যা আগে ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কমে হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি।
সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের হিসাবে, রোজায় খুচরা পর্যায়ে বড় দানার মসুর ডালের দাম কমেছে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। পণ্যটির দাম কমে ২৮ এপ্রিল বা চার রোজায়। রোজার আগে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বড় দানার মসুর ডালের দাম কমে হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা।
এদিকে সবজির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি বিরাজ করছে। অধিকাংশ সবজির দাম আগের মতোই রয়েছে। এখনও প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রতিকেজি গাজর ৩৫-৪০ টাকা। প্রতিকেজি শসা ৩০ থেকে ৪৮ টাকা, বেগুন ৪০-৫০ টাকা। শুক্রবার সজনের ডাটার প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকা। টমেটো বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা, করলার কেজি ৩০-৪০ টাকা, বরবটি ৪০-৫০ টাকা কেজি, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা কেজি, পটল ৪০-৫০ টাকা, ঝিঙা ৪০-৫০ টাকা এবং চিচিংগার দাম প্রতিকেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা।