নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম একদম কেটে ফেলেছিলেন গোঁফ। চুল ছোট ছোট করে কেটেছিলেন। আর নারীর ছদ্মবেশ নিতে পরেছিলেন বোরকা। এভাবেই সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর জন্য উঠেছিলেন মাছ ধরার নৌকায়। তবে জানতেন না আগে থেকেই দেবহাটা থানার ইছামতী নদীর কাছে ওঁৎ পেতে ছিলেন র্যাবের সদস্যরা। স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় সাহেদ নৌকায় ওঠার পরপরই তাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেন র্যাবের সদস্যরা।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার (১৫ জুলাই) ভোর ৫টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার কামালপুর গ্রামে লবঙ্গবতী খালের পাশে ইছামতী নদী থেকে রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে গ্রেফতার করে র্যাব।
কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, ‘গত ৯ দিন ধরে তাকে অনুসরণ করা হচ্ছিল। ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তনের কারণে গ্রেফতারের খুব কাছাকাছি পৌঁছাতে পারলেও অল্পের জন্য মিস করেছি। পরশুদিন রাত থেকে তাকে অনুসরণ করে গ্রেফতার করা হয়।’
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘সীমান্ত পার হওয়ার জন্য মাছ ধরার নৌকায় উঠেছিল সাহেদ। নৌকায় ওঠার পর তাকে গ্রেফতার করি। সীমান্ত পার হতে স্থানীয় কয়েকজন দালাল তাকে সহায়তা করছিল। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে তিন রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করতে চেয়েছিলেন সাহেদ।’
সাতক্ষীরা থেকে গ্রেফতারের পর তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। রাজধানীর পুরাতন বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাবের কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ম্যাগাজিনের তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টাকালে তার কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত ১৩ জুলাই সাহেদের ফোন ট্র্যাক করে তার খোঁজে মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে তল্লাশি চালায় র্যাব ও পুলিশ। তবে সেখানে তাকে পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সাহেদকে ধরতে মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) থেকে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকায় চিরুনি অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
জেলা পুলিশ সীমান্তে যাওয়ার পথে প্রায় সব গাড়িতে তল্লাশি চালায় দিনে-রাতে। একইসঙ্গে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি সীমান্তে টহল জোরদার করে। পাশাপাশি চলে গোয়েন্দা নজরদারি।
গত ৬ জুলাই র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এরপর থেকেই পলাতক ছিলেন হাসপাতালটির মালিক মোহাম্মদ সাহেদ।
৭ জুলাই রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করা হয়। ৯ জুলাই সাহেদের মুখপাত্র তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীকে এবং ১৪ জুলাই রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন