এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রামে চাঁদাবাজ চক্রের নতুন কৌশল হিসাবে ফেসবুকে মেয়ে দিয়ে প্রেমের ফাঁদ পেতে এক যুবকের এনড্রয়েড মোবাইল, নগদ টাকা, পরে জিম্মি রেখে আত্মিয়-স্বজন ও বন্ধুদের কাঁছ থেকে ৩০,০০০ টাকা এবং ভুক্তভোগী যুবকের বিকাশের পিন নাম্বার নিয়ে তার বিকাশ থেকে ৩০,০০০ টাকা উত্তোলন পুর্বক তাকে মারধর করে হত্যার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার মত চাঞ্চল্যকর চাঁদাবাজির ঘটনার মামলার সূত্র ধরে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানা পুলিশের তাৎক্ষনিক দায়িত্বশীল অভিযানে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের মুলহোতা ১ নারীসহ ৩ চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত চাঁদাবাজরা হচ্ছেন, মামলার প্রধান আসামী আনিসুল ইসলাম আহাদ, মাহমুদা হক প্রকাশ মুমু (খুলশী, জালালাবাদ), আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক থেকে ওসমান খালেক সাইহান।
১৮ মার্চ’২৪ ইং সোমবার সিএমপি’র ডবলমুরিং থানা পুলিশ ভিন্ন ভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা ও খুলশী জালালাবাদ থেকে আসামীদের গ্রেফতার করা হয় এবং লুটের অর্থের কিছু অংশ ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার বিবরনে প্রকাশঃ ভূক্তভোগী যুবকের সাথে ০৩/০৪ দিন পূর্বে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ মাহমুদা নামের এক মহিলার। পরিচয় হওয়ার পর থেকে মাহমুদার সাথে বাদী/ভিকটিমের কথাবার্তা হয়। কয়েকদিন কথা বলার পর মাহমুদা বাদী যুবককে তার সাথে দেখা করতে বলে। গত ১৭/০৩/২০২৪ ইং তারিখ অনুমান রাত ০৮.০০ ঘটিকার সময় মাহমুদার সাথে ডবলমুরিং মডেল থানাধীন আগ্রাবাদ সিডিএ ৬নং রোডের শেষ মাথায় নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের সামনে দেখা করতে গেলে আসামী মাহমুদা বাদীকে উক্ত নির্মাণাধীন ভবনের ৩য় তলায় নিয়ে যায়। তথায় পৌঁছানোর ০২ থেকে ০৩ মিনিটের মধ্যে অজ্ঞাতনামা ০৪ জন তথায় এসে উপস্থিত হয়। উক্ত আসামীরা বাদীকে এলোপাথারি কিল, ঘুষি মারতে থাকে এবং আসামীরা ধারালো ছোরার ভয় দেখিয়ে বাদীর ব্যবহৃত Samsung S20 Ultra 5G মডেলের মোবাইল ফোন জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। একপর্যায়ে অজ্ঞাতানামা আসামীরা বাদীর পকেটে থাকা নগদ ৬,০০০/- টাকা এবং বাদীর জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নেয়।
অজ্ঞাতনামা আসামীরা বাদীর নিকট ২ লক্ষ টাকা দাবী করে, অন্যথায় বাদীকে মেরে ফেলবে মর্মে হুমকি দেয়। বাদী ভূক্তভোগী যুবক প্রানভয়ে বাদীর মোবাইল নম্বর হতে নিকটতম কয়েকজন বন্ধুকে ফোন দিয়ে টাকা চাইলে বাদীর এক বন্ধু ২০ হাজার টাকা এবং বাদীর অফিস কলিগ বাদীর বিকাশে ১০ হাজার টাকা মোট ৩০ হাজার টাকা প্রেরণ করে। তখন অজ্ঞাতনামা আসামীদের মধ্য হতে ০২ জন আসামী বাদীর বিকাশের পিন নাম্বার নিয়ে নিচে নেমে বাদীর বিকাশ একাউন্ট হতে পর্যায়েক্রমে ৩০,০০০/- টাকা উত্তোলন করে নেয়। উক্ত ঘটনার বিষয়ে বাদী থানা পুলিশ কিংবা পরিবারের কাউকে কিছুই যেন না বলে সে জন্য অজ্ঞাতনামা আসামীদের ব্যবহৃত মোবাইলে ভুক্তভোগী যুবকের জোরপুর্বক বক্তব্য রেকর্ডসহ ভিডিও ধারন করে। পরবর্তীতে অজ্ঞাতানামা আসামীরা বাদীকে প্রাণে হত্যার ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ে নিচে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে বলে। বাদী প্রাণ ভয়ে কাউকে কিছু না বলে সিএনজিযোগে বাসায় যায়। বাদীর এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ডবলমুরিং মডেল থানায় মামলা রুজু হয়। ডবলমুরিং থানার এসআই আহলাদ ইবনে জামিল পিপিএম এর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক টিম অভিযোগের পর পর তাৎক্ষনিক অভিযান পরিচালনা করে তথ্য প্রযুক্তি সহায়তায় বাদীর সনাক্ত মতে অত্র মামলার আসামী ওসমান খালেক সাইহান (২২)কে ডবলমুরিং মডেল থানাধীন আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিকের ৬নং রোডের মাথা হতে গ্রেফতার করেন এবং মামলার আলামত হিসাবে লুন্ঠিত টাকার তার ভাগের ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা জব্দ করেন। তার দেওয়া তথ্য মতে ঘটনার প্রধান আসামী আনিসুল ইসলাম আহাদ (২২)কে গ্রেফতার করেন এবং বাদীর কাছে থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়া মোবাইল ফোন Samsung S20 Ultra জব্দ করেন। গ্রেফতারকৃত আসামী আনিসুল ইসলাম আহাদ (২২) এর দেয়া তথ্য মতে এবং বাদীর সনাক্ত মতে এজাহারনামীয় ১নং আসামী মাহমুদা হক প্রঃ মুমু (২০)কে খুলশী থানাধীন দক্ষিণ জালাবাদস্থ গার্ডেন ভিউ আবাসিক এলাকার বর্তমান বাসা হতে গ্রেফতার করেন।
ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) ফজলুল কাদের পাটোয়ারী জানান, মামলার আসামীরা সমাজের ভিত্তবান ব্যক্তিদের টার্গেট করে। মামলার প্রধান আসামী আনিসুল ইসলাম আহাদ (২২) এর স্ত্রী মাহমুদা হক প্রঃ মুমু (২০)কে দিয়ে প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমকে আটকে রেখে ধারালো ছোরার ভয় দেখিয়ে, হত্যার হুমকি দিয়ে, মারধর করে চাঁদা আদায় করে। ১৭ মার্চ এক যুবককে সোস্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার সর্বস্ব কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে ডবলমুরিং থানা পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের অন্যতম ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ্য করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে অন্যান্যদের গ্রেফতারেও অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন ওসি পাটোয়ারী