মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বগুড়ার শেরপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সাতটি বাড়ির বাথরুম ও রান্নাঘর ধসে গেছে। বাড়িগুলো নির্মাণে দায়িত্বশীলদের স্থান নির্ধারণে অবহেলা, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এক প্রজ্ঞাপনে নির্মাণ কমিটির সভাপতি ও শেরপুর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সেখকে ওএসডি করা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।
বুধবার খবরটি প্রচার হওয়ায় জেলায় নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে ও শেরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় শেরপুর উপজেলায় দুই কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে দুই শতক করে খাসজমি বন্দোবস্ত দিয়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে দরিদ্র ভূমিহীন ১৬৩ পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়। দুটি কক্ষ, রান্নাঘর, টয়লেটসহ প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয় এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এর ধারাবাহিকতায় উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খানপুর বুড়িগাড়ি এলাকায় খালের কিনারায় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২২টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়। গত জানুয়ারিতে বাড়িগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে খালের মাটি সরে যাওয়ায় গত ২২ জুনের আগে সুবিধাভোগী হায়দার আলী, আবদুল কাদের, বাদশা মিয়া, শেফালী বেগম, নদীয়ার চাঁদ, মোকছেদ আলী, সোনা উদ্দিনের বাড়ির বাথরুম, রান্নাঘরগুলো খালে ভেঙে পড়ে যায়।
সুবিধাভোগী শেফালী বেগমসহ কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বসবাস শুরুর আগেই একটি ঘর ছাড়া সবই খালে ভেঙে পড়েছে। অন্য ঘর ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন। প্রকল্পের অপর ১৫টি বাড়ি ঠিক থাকলেও সেখানে থাকতে সাহস করছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, তড়িঘড়ি করে খালের কিনারায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া খালের মাটি কেটে বাড়ির চারপাশে দেওয়া হয়। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি খালে ধসে যাওয়ায় ঘরগুলোর এ অবস্থা হয়েছে। তারা এজন্য সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লিয়াকত আলী সেখ এবং কমিটির অন্যদের স্থান নির্ধারণে অদূরদর্শিতা, অবহেলা ও দুর্নীতিকে দায়ী করেন।
প্রকল্পের ঘর ধসে যাওয়ার খবর পেয়ে নবাগত শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম গত ২২ জুন পরিদর্শন করেন। এরপর মাটি ধসে যাওয়া বন্ধ করতে বাঁশের পাইলিং করতে বাথরুম ও রান্নাঘর সংস্কারের নির্দেশ দেন।
খানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রঞ্জু জানান, ধস বন্ধে খালের ধারে বাঁশের পাইলিং দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভেঙে পড়া বাথরুম ও রান্নাঘর পুনর্নির্মাণ করার কাজ চলছে।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম বুধবার বিকালে জানান, প্রথম প্রকল্পের কয়েকটি বাড়ির বাথরুম ধসে যাওয়ার খবর পেয়েই পরিদর্শন এবং মেরামতের নির্দেশ দেন। বিষয়টি প্রকল্প পরিচালককেও অবহিত করা হয়। প্রতিরক্ষা গাইডওয়াল নির্মাণ ও ধসে যাওয়া বাথরুমগুলো সংস্কারের কাজ চলছে। শিগগিরই কাজ শেষ হবে। সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আল সেখের ওএসডি হওয়া সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক জানান, খালের ভূমি ধসের কারণে শেরপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি বাড়ির ওয়াশরুম ভেঙ্গে পড়ে। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শে কাজ চলছে। এখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কোনো দুর্নীতি ছিল না। তারপরও তিনি কমিটির সভাপতি হওয়ায় তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ওএসডি করেছে। কমিটির অন্যরা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।