কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে আদালতে বিচারাধীন জমিজমার বিরোধ নিয়ে পুলিশি হয়রাণি ও জীবনের নিরাপত্তার দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে করেছে কৃষক আব্দুর রহমান ও তার পরিবার। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে সৈয়দ শামসুল হক মিলনায়তনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান নাগেশ্বরী পৌরসভার বাসিন্দা কৃষক আব্দুর রহমান।
তিনি দাবি করেন নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ রওশন কবির, এসআই তাজেদুর রহমান ফারুকী এবং অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ হাসানের উপস্থিতিতে বিবাদি পক্ষ ও দালালদেরকে নিয়ে যোগসাজস করে তার পরিবারের উপর হামলা, হয়রাণি, হত্যাচেষ্টা ও ক্রস ফায়ারের হুমকী দেন। ফলে পরিবারটি পুলিশি আতংকে রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় ভুমিদস্যু আব্দুস সাত্তার জাল দলিলের মাধ্যমে জজ আদালতে বিচারাধীন আব্দুর রহমানের জমি দখল করে ঘর তোলার চেষ্টা করেন। বিষয়টি নাগেশ্বরী থানায় অভিযোগ করলে এসআই তাজেদুর রহমান ফারুকী জমি দখলের সরঞ্জামাদি অপসারণ করে থানায় জব্দ করেন। পরে বিবাদির কাছে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে পুণরায় জব্দকৃত সরঞ্জামাদিসহ স্থানীয় সন্ত্রাসী জুয়েল, পনির ও মিন্টুসহ আব্দুর রহমানের জায়গা দখল করতে আসে। আব্দুর রহমান ধাওয়া খেয়ে পুণরায় থানায় অভিযোগ দেন। পরে এসআই জুয়েল ঘটনাস্থলে এসে তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ রওশন কবির তার কক্ষে অপেক্ষামান দালাল মাহবুর ও জয়নাল একটি রাজনৈতিক পরিবারের নির্দেশনায় আটককৃতদের ছেড়ে দেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারি জজ বিবাদিদের পক্ষে নিষেধ্যজ্ঞা দেন। এ ঘটনার পর বিবাদি আব্দুস সাত্তার দালাল মাহবুব ও জয়নালসহ আরো সন্ত্রাসীদেরকে পুণরায় বিচারাধীন জায়গায় ঘর তোলার প্রচেষ্টা নেয়। বিষয়টি নাগেশ্বরী থানায় অভিযোগ আকারে জানালে এসআই আলিফ নুর ঘটনাস্থলে গিয়ে দালাল মাহবুর ও জয়নালকে আদালতের নির্দেশনা পড়ে শোনালে দালালরা এসআই আলিফ নুরের সাথে খারাপ আচরন করে। তিনি ঘটনাটি নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ রওশন কবিরকে তিনি আলিফ নুরকে সেখান থেকে চলে আসতে বলেন। এরপর থানার দালালরা মোবাইলে আব্দুর রহমানকে পুড়িয়ে মারা হুমকী দেন। বিষয়টি ওসি এবং এসআই ফারুকীকে জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। পরে দালালরা আব্দুর রহমানের বাড়ির সিদ কেটে মোবাইল, স্বর্নলংকার ও মূল্যবান দলিলপত্রাদি চুরি করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাইনি।
অবশেষে চলতি বছরের ২৯ জুন কৃষক আব্দুর রহমান মহাপুলিশ পরির্দশককে লিখিত অভিযোগ করলে ২১ ও ২২ আগস্ট দালাল বেলাল, রশিদ সাত্তারসহ এসআই ফারুকী বিভিন্ন ভয়ভীতি ও ম্যানেজ করার চেষ্টা চালান। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তার পরিচয় গোপন পুলিশ সুপারের নাম ভাঙিয়ে ২৪ আগস্ট থানার পুরো গ্যাং, নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ রওশন কবির, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসানের সামনে ভয়ভীতি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এসময় যোগ দেয় বিবাদি পক্ষও। এমন পরিস্থিতিতে এসআই তাজেদুর রহমান ফারুকী বাদি আব্দুর রহমান ও তার পরিবারের লোকজনকে গ্রেফতার, হত্যা, গুম ও ক্রসফায়ারের হুমকী দেয়। এসময় তারা মানসিক টর্চার করে তাদেরই লেখা মুছলেকায় জবরদস্তী করে স্বাক্ষর গ্রহন করে। আদালতে মামলাধীন জমির সূল্য ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে বিবাদির পক্ষে রায় ঘোষণা করেন। এর ফলশ্রুতিতে ২৮ আগস্ট বিবাদি পক্ষ মামালাধীন জমিতে হালচাষ শুরু করে।
এ ঘটনার পর কৃষক আব্দুর রহমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর গত ২৪ আগস্ট অভিযোগ দায়ের করেন এবং মামলাটি পিবিআই বা অন্য কোন সংস্থা কর্তৃক পূণরায় তদন্ত করার আবেদন করেন।
অপরাপর এসকল ঘটনার পর ভীত সন্ত্রস্ত পরিবারটি জীবনের ভয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অবগত করেন। তারা এসময় পিবিআই বা অন্য কোন সংস্থা থেকে পুনরায় তদন্তকরণ, পুলিশি হয়রানি থেকে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের দৃষ্টি কামনা, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন, জোড়জবরদস্থিমূলক মুছলেকা কপি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন না করা এবং এই সংবাদ সম্মেলনের পর তিনিসহ পরিবারের কোন সদস্যের ক্ষতি হলে নাগেশ্বরী থানার পুলিশ প্রশাসনসহ তাদের নিযুক্ত দালাল ও উল্লেখকৃত সন্ত্রাসীরা দায়ি থাকবেন বলে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু ও সাধারণ সম্পাদক খ.ম আতাউর রহমান বিপ্লবসহ জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।