আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদত করার জন্য। এ পৃথিবীর মহা ব্যস্ততা যেন মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে প্রতি মুহুর্ত বিচ‚্যত করতে চায়। মানুষকে আল্লাহর পথে রাখার জন্য তিনি যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসুল পাঠিয়েছেন। রাহমাতুল্লিল আলামীনের আগমনের পর নবুয়্যতের পরিসমাপ্তি, তিনিই শেষ নবী। এরপর উক্ত দায়িত্ব সলফে সালেহীনগণ পালন করেছেন ওয়ারিসাতুল আম্বিয়া হিসাবে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়ের্ছি কালশ্রেষ্ঠ রাহবার, যুগশ্রেষ্ঠ মনীষি, খলিলুল্লাহ আওলাদে মোস্তফা খলিফাতুর রাসুল হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজমকে। যিনি শরীয়তের পূর্ণাঙ্গ অনুশীলনের মাধ্যমে সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের তরিক্বত। যে তরিক্বতের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ সন্ধানী মানুষদের আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। দরূদের তালিম দেওয়া, মোরাকাবা ও ফয়েজে কোরআনের দীক্ষায় মানুষকে দিক্ষিত করা।
তিনি গত ৮ মার্চ সোমবার চট্টগ্রাম হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা উচ্চ বিদ্যালয় ময়দানে অনুষ্ঠিত এশায়াত মাহফিলে হাজারো নবীপ্রেমিক মুসলমানের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের মোর্শেদে আজম আওলাদে রাসূল হযরতুলহাজ্ব আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এ তরিক্বতের অন্যতম প্রধান শিক্ষা হল মানুষের অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধি। নফসের প্রভাব থেকে মুক্তির সাধনা। আত্মশুদ্ধির অনন্য পাঠ এ তরিক্বতের প্রতিটি পর্যায়ে। হযরত গাউছে আজম রাদ্বিয়াল্লাহু বলেছেন, “আমাদের তরিক্বত হচ্ছে এছলাহে বাতেনী অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধি, তরিক্বতপন্থিদের নিয়্যত খালেছ না হলে এ পথে উন্নতির আশা বৃথা”। এ তরিক্বতে আসার পর একজন মানুষ যখন ক্বলব, রূহ, ছির, খফি, আখফায় তাওয়াজ্জুহর মাধ্যমে নূরে মোস্তফা(দঃ) গ্রহণ করে তখন হৃদয় হয় নবী প্রেমে ভরপুর, ফলশ্রæতিতে জীবনের সবখানে ঐ ব্যক্তি শরীয়তের বিধি নিষেধের উপর অটল থাকে, সুন্নাতের প্রতি টান বাড়ে, খুলুছিয়তের পথে অবিচল থাকে, আখেরাতের ভাবনায় সদা-সর্বদা নিমজ্জিত থাকে, হালাল-হারামের প্রতি সচেতন থাকে, ইনসাফের মানদন্ডে পরিচালিত করে জীবন। আধুনিক পৃথিবীর এ সময়ে হযরত গাউছে আজমের তরিক্বত যুগোপযোগী, সময়োপযোগী এবং যুগান্তকারী একটি তরিক্বত। উল্লেখ্য যে এখানে পুরুষরা দরবার শরীফে গিয়ে নূরে মোস্তফা গ্রহণ করেন কিন্তু এই নিয়ামত গ্রহণ করার জন্য মহিলাদের দরবার শরীফে আসতে হয় না বা গাউছুল আজমকেও কোন মহিলার ঘরে যেতে হয় না, তাওয়াজ্জুহ বিল গায়েবের মাধ্যমে সে নিয়ামত পর্দার নিয়ম রক্ষা করে গ্রহণ করতে পারেন।
এর আগে তিনি উত্তর মাদার্শা উচ্চ বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার,কম্পিউটার ল্যাব এবং অডিটরিয়াম পরিদর্শন করেন এবং বর্তমান সরকারকে শিক্ষাবান্ধব সরকার উল্ল্যেখ করে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সরকারের ভ‚য়সী প্রশংসা করেন।
পবিত্র মিরাজুন্নবী (দ.) মাহফিল ও কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুল্লাহ আওলাদে মোস্তফা, খলিফায়ে রাসূল হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু স্মরণে এ মাহফিলের আয়োজন করে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ ৫নং উত্তর মাদার্শা শাখা।
সভাপতির বক্তব্যে উত্তর মাদার্শা উচ্চ বিদ্যালয় এর সভাপতি আলহাজ¦ মোহাম্মদ নুর খান বলেন, যুব সমাজের চরিত্রের উন্নয়নে কাগতিয়া দরবার ও মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা দেশ ও জাতির কাছে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের সভাপতি এবং সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর, হযরতুলহাজ¦ মাওলানা এরশাদুল হক, মাওলানা আবদুছ ছবুর, মাওলানা জমিস উদ্দীন মুনিরী প্রমূখ।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উত্তর মাদার্শা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক হযরতুলহাজ¦ আল্লামা আবুল কাসেম আনছারী, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সমাজ সেবক এম. আজিজুল হক দৌলত, মোহাম্মদ শফিকুল আলম হেলাল, শেখ মোহাম্মদ ইউছুফ, সাঈদ সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন সৌরভ, মোহাম্মদ মুজিবুদ্দৌলা চৌধুরী, মোহাম্মদ সাহেদুল আলম সাহেদ প্রমূখ।
মাহফিলে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি, আলেম, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, ছাত্র ছাড়াও সর্বস্তরের নবীপ্রেমিক হাজার হাজার মুসলমান উপস্থিত ছিলেন। মাহফিলে হুজুর ক্বেবলাকে একনজর দেখার এবং তাঁর গুরুত্বপূর্ণ তকরির শুনার জন্য এলাকার সর্বস্তরের মুসলমান মাগরিবের পর থেকে জমায়েত হতে শুরু করে। এসময় মাহফিলস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। মিলাদ ও কিয়াম শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ্র ঐক্য, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ফুয়ুজাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করেন।