তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে হাকালুকি হাওরের পানি স্থিতিশীল থাকায় জেলার তিন উপজেলায় বন্যার পানি ধীরগতিতে কমছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে বসবাসকারী বাসিন্দাদের।
জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে ত্রাণের কোন সংকট নেই বলা হলেও বন্যাকবলিত এলাকার অনেকেই ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
এদিকে হাওড়াঞ্চলে অল্প পরিমাণে পানি কমলেও এখনো মানুষের বাড়ি-ঘরে পানি রয়েছে এতে প্রায় ২ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী এই তিন উপজেলায় নদ-নদী ও হাকালুকি হাওরের পানি বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জুড়ী নদীসহ হাকালুকি হাওরের নদ-নদী, খাল-বিল, নালা খনন না হওয়ায় তলদেশ দিন দিন ভরাট হচ্ছে। ফলে নদ-নদী টুইটুম্বর হয়ে পানি ধারণের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় স্বল্পমাত্রায় বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানি দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এই তিন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের স্থানীয় লোকজন আক্ষেপের সুরে বলেন, যারা আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন, তারা সহায়তা পাচ্ছেন। তবে যারা বাড়িতে আছেন তাদের অনেকেই সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওরপারের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বন্যায় হাওরপারের অনেকেই ছুটে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে, কেউবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। তবে ঝুঁকি জেনেও পানির মধ্যেই বেশিরভাগ মানুষ রয়ে গেছেন। তারা ভোগান্তির মধ্যেই জীবনযুদ্ধে লড়াই করছেন।
হাকালুকি হাওরের জুড়ী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মাহি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বন্যায় নিম্নাঞ্চলের এলাকাগুলো এখনো প্লাবিত, অনেক ঘরবাড়ি ও সড়কে পানি রয়েছে। তবে উজানের অবস্থা কিছুটা ভালো।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাদু মিয়া জানান, জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলায় এখনও প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী আছে। আগের চেয়ে পানি কমেছে, তবে ধীরগতিতে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি ধীরগতিতে কমায় হাকালুকি হাওরের পানিও ধীরগতিতে কমছে।
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ত্রাণের কোনো সংকট নেই। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। এগুলো বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যারা আছে, তাদের শুকনো খাবারের পাশাপাশি চাল দেওয়া হচ্ছে।
পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাওয়ার স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক পানিবন্দী মানুষের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।