আবুল কাশেম রুমন,সিলেট: সিলেট জুড়ে নিম্ন মুখী থাকলেও মার্চ মাসের শুরু থেকে হঠাৎ করে সিলেটে করোনার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। হাসপাতালেও বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এমনকি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেও (আইসিইউ) রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ অবস্থায় মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্য বিধি পালনের উপর সরকার ফের কঠোরতা অবলম্বন করছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৪ মার্চ রোববার দুপুর পর্যন্ত সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে ৪১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যাদের মধ্যে ২০ জন করোনা পজিটিভ। এদের ১১ জনকে হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বাকি ২১ জন রোগী করোনার বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন ।
হাসপাতালের ডেপুটি আরএমও ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, বর্তমানে সিলেটের করোনা আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি করোনার বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যা সামলাতেও কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের।
১৪ মার্চ রোববার ঢাকার শ্যামলীর টিবি হাসপাতালে ওয়ান স্টপ টিবি সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে করোনা নিয়ে সামনের দিনে বড় বিপদের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে বড় বিপদের শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত দুই মাস আমরা স্বস্তিতে ছিলাম, তাই এখন আমরা কোনো কিছু মানছি না। সামনের দিকে আমরা আরো বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছি যদি আমরা স্বাস্থ্য বিধি না মানি।
তিনি বলেন, গত দুই মাসে আমার কাছে কখনোই আইসিইউ বেডের জন্য কোনো অনুরোধ আসেনি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ফোন পাচ্ছি আইসিইউ বেড পাওয়া যাচ্ছে না, দেন। এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন। আগে আমরা দেখছিলাম যাদের কোমর্বিডিটি আছে তাদের আইসিইউ লাগত। এখন ইয়াং, ভালো, সুস্থ, তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান বলেন, সংক্রমণ একটু কমেছে বলে সবাই স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করছি, যা মোটেই কাম্য নয়। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ব্যাপারে সিলেটের সর্বত্র মানুষের মধ্যে চরম উদাসীনতার কারণে ফের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, এটা উদ্বেগজনক। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্রলাতে ব্যাপক জনসমাগমে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলায় চরম ঝুঁকি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সচেতনতা জরুরি। পাশাপাশি এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের ওপর জোর দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) এর কার্যালয় থেকে প্রেরিত কোভিড-১৯ কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সিলেট বিভাগে ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় করোনা ভাইরাস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন একজন ২ এবং এ রোগ থেকে মুক্ত হয়েছেন ১৭ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগে গতকাল রোববার নতুন শনাক্ত হয়েছেন ১৬ জনের মধ্যে ১৩ জন সিলেট জেলার এবং ৩ জন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের।
এই ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের চার জেলার করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৭৯ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ২১৫ জন, সুনামগঞ্জে ২৬ জন, হবিগঞ্জে ১৬ জন এবং মৌলভীবাজারে রয়েছেন ২২ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগের মধ্যে সিলেট জেলার ২ জন রোগি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন সিলেট জেলার ৩৯ জন ।
১৪ মার্চ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনামুক্ত ১৭ জনের মধ্যে সবাই সিলেট জেলার। এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হচ্ছে ১৬ হাজার ৪৮২ জন। অন্যদিকে, সিলেট বিভাগে করোনা মুক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৮০২ জন।
২০২০ সালের ৫ এপ্রিল সিলেটে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তিনি ছিলেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। ১৫ এপ্রিল তিনি মারা যান।
করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গত ২৭ জানুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এদিন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেটসহ দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়।