আবদুল্লাহ আল মামুন, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় এক বছরের ব্যবধানে নিত্যপণ্য ও সেবার দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। এর বিপরীতে অর্থনৈতিক মন্দায় বাড়েনি মানুষের আয়। ফলে বাধ্য হয়ে ভোক্তাকে খাবার উপকরণ কেনা কমাতে হচ্ছে। একই সঙ্গে কমাতে হচ্ছে ভ্রমণ, শিক্ষা, বিনোদনসহ অন্যান্য খাতের খরচ।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আয় ও ব্যয়ের মধ্য সমন্বয় করতে মানুষ প্রথমে দৃশ্যত অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন সব খারচ কমিয়েছে। এতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় খাবারে হাত পড়েছে। খাবার খরচ কমানোর ফলে বাড়ছে পুষ্টিহীনতা। এর প্রভাবে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের খরচ কমিয়েও এখন সংসারের হাল ধরে রাখা যাচ্ছে না। জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকে বাধ্য হয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউবা পরিবার-পরিজন গ্রামে পাঠিয়ে নিজে শহরে থাকছেন। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ায় ও বিনিয়োগ না হওয়ায় কর্মসংস্থান বাড়েনি। এমন কি যারা কর্মে ছিলেন তাদের অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। চাকরিরতদের মধ্যে অনেকের বেতন-ভাতা নিয়মিত হচ্ছে না। করোনার পর থেকে গত প্রায় ৩ বছরে বেতন বাড়েনি।আগের বেতনেই কাজ করছেন। ওই সময়ে পণ্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি বাদ দিলে প্রায় সবারই আয় কমেছে। এর মধ্যে খণ্ডকালীন ও মৌসুমি কাজের মানুষের আয় কমেছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয় থেমে থাকেনি।
গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল এসব ব্যয় মেটাতে আগে সঞ্চয় ভেঙেছেন। এখন ধার করছেন। সবকিছুর দাম বাড়তি থাকায় এখন মাংস তো কেনাই হয় না। আগে সপ্তাহে দু-তিন দিন মাংস থাকত। এখন থাকে ডিম আর সবজি। ডিমের দাম যেভাবে বেড়েছে সেটিও এখন আর প্রতিদিন থাকে না।এখন নিম্ন আয়ের মানুষের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এর ওপর ভর করেছে মধ্য আয়ের মানুষ।
খাবারের পাশাপাশি অত্যবশ্যকীয় সেবার দাম বেড়েছে লাগামহীন। এর মধ্যে বিদ্যুতের দাম দুই দফায় বেড়েছে ১০ শতাংশ। গ্যাসের দাম দুই দফায় বেড়েছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অন্য সব পণ্য ও সেবার দামও বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গণপরিবহণের ভাড়া প্রায় শতভাগ। এসব মিলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে লাগামহীন।এসব ব্যয়ের বিপরীতে মজুরি বেড়েছে খুবই সামান্য। মজুরি ১৯৩ থেকে বেড়ে ২০৭ টাকা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ। অথচ ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ। ঘাটতি থাকছে দেড় শতাংশ। এ ঘাটতি মেটাতে খাবারসহ বিভিন্ন খাতে খরচ কমানোর পাশাপাশি ঋণগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। অনেকে সঞ্চয় ভাঙছেন।
পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার চালাতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। ফলে তারা সঞ্চয় করতে পারছেন না। এমন কি আগের সঞ্চয় ভেঙে সংসারের জীবিকা নির্বাহ করছেন। এতে জাতীয় সঞ্চয়ে টান পড়েছে। মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজেদের হাতে রাখছে।