![InShot_20220201_191323948](https://banglaexpressonline.com/wp-content/uploads/2022/02/InShot_20220201_191323948-scaled.jpg)
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের লবিস্ট নিয়োগে অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাকে ধামাচাপা দিয়ে কর্তৃত্ববাদী অবৈধ সরকার জনগণের করের টাকায় আমেরিকায় লবিস্ট নিয়োগ করেছে; যা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে স্বীকৃত। সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, খুন, গুমের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির দায় কিংবা ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতায় নিমজ্জিত প্রতিষ্ঠানের দায় রাষ্ট্র কিংবা সরকার কীভাবে জনগণের টাকায় ভাবমূর্তি রক্ষার নামে ব্যয় করে? বিএনপি মনে করে, জনগণের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টিই প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি মনে করে, সরকার জড়িত না থাকলে তা প্রমাণের জন্য তারা সাত কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করতো। খুন, গুম, গায়েবি মামলা দায়ের বন্ধ করে, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে হেঁটে সরকার পদত্যাগ করতো।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সজীব ওয়াজেদ জয়ের সংশ্লিষ্টতায় ৯০ লাখ ডলার(৯ মিলিয়ন) খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে। যার প্রমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েব পেজে আছে। বিএনপি জানতে চায়, সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওই টাকার উৎস কি ছিল? কীভাবে ওই টাকা বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছিল?
অপপ্রচারে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে সরকারের এমন অভিযোগের জবাবে ফখরুল আরও বলেন, বিএনপি লবিস্ট নয়, উন্নয়ন সহযোগীদের চিঠি দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে কথা বলেছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী। যে চি্ঠির কথা বলা হয়েছে, এই চিঠি দেখিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। আপনারা দেখুন (নিজের স্বাক্ষরিত চিঠি দেখিয়ে) ওটা কাকে লেখা হয়েছিল এবং চিঠির বিষয়বস্তু কি ছিল? বিএনপি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার সকল ব্যক্তির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল; মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সবচেয়ে বড় ভ্যানগার্ড।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি তার আন্দোলন-সংগ্রামের অংশ হিসেবেই দেশের ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের সময় চায়, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ চায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে দেশি-বিদেশি সব অংশীদারদের এই সরকারের সকল অপকর্ম সম্পর্কে অবগত রাখতে চায়। বিদেশিদের কাছে লেখা আমার ওই চিঠিসমূহ কোনো লবিস্ট নিয়োগের বিষয় নয়, মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহ্বান মাত্র।
প্রবাসী বাংলাদেশি একজনের লবিস্ট নিয়োগ সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনার দেখেছেন একজন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্তৃক লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি আজও আমাদের দলের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। আমরা বলতে চাই, দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রবাসী কোনো পদক্ষেপ কোথাও নেয়, দেশের প্রতি তার ভালোবাসার জন্য যদি কিছু করে সে পদক্ষেপের দায়িত্ব তার, বিএনপির নয়। ওই পদক্ষেপকে নৈতিকভাবে সমর্থনের দায়িত্ব বাদে অন্য কোনো দায়-দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না। তবে বিশ্বের দেশে দেশে প্রবাসীদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য এই ধরনের দেশপ্রেমিক পদক্ষেপকে বিএনপি সাধুবাদ জানায় এবং তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
সরকার উল্টোপথে হাঁটছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশ হলে সরকার সর্বপ্রথমেই নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি কার্যধারা শুরু করতো। অথচ কর্তৃত্ববাদী সরকার হাঁটছে উল্টোপথে। গুমের শিকার পরিবারের বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, খুনিদের রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য বিএনপি অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ চায়, খুন, গুমের সঙ্গে জড়িত নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সকলের নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক আইনের ব্যবস্থা গ্রহণ, মানবাধিকার নিশ্চিত করা, বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ফেরত এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়।
নির্বাচন কমিশন গঠনে সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ আইনটি গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।