সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারের আগে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান সংক্রান্ত সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ রায় দেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরি আইন প্রণয়ন করা হয়।
সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা সংক্রান্ত আইনের ৪১ (১) ধারাটি সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থী উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়।
এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি হাইকোর্ট রুল জারি করে দেন। রুলে সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারাটি কেন সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চাওয়া হয়। এ রুলের ওপর গতকাল বুধবার শুনানি শেষ আজ রায় দেয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র এডভোকেট মনজিল মোরসেদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী একলাস উদ্দিন ভুঁইয়া, রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মন্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
সরকারি চাকরি আইনে ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাদি-সংক্রান্ত আইনের ৪১ (১) ধারার ভাষ্য, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে শুনানিতে এডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, সংবিধান অনুসারে সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। সরকারি চাকরি আইনের ধারাটি বৈষম্যমূলক বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন তিনি।
মনজিল মোরসেদ রায়ের পর সাংবাদিক বলেন, আদালত রায়ে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর ৪১(১) ধারা বেআইনি, সংবিধান ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি বলে ঘোষণা করেছেন। আদালত বলেছেন যে- সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। তারপরও ৪১(১) ধারা করে সেখানে সরকারি কর্মচারীদেরকে আলাদাভাবে একটি সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। তা কেনোভাবেই সংবিধান সম্মত নয়, এ আইনি একটি মেলাফাইড (অসৎ) উদ্দেশে করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষা দিতে এ আইনের ৪১(১) ধারা সংযোজন করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ রায়ের ফলে তাদের গ্রেফতারে এখন আর পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই।
মনজিল মোরশেদ বলেন, আমরা আদালতকে দেখিয়েছি-এই আইন করার পেছনে একটাই উদ্দেশে সেখানে সরকারি কর্মচারীদেরকে সাধারণ নাগরিক থেকে একটু আলাদা করে তাদেরকে একটি বিশেষ শ্রেণি হিসেবে দেখিয়ে, তাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। অপরাধ করলেও যেন তারা অপরাধী হিসেবে শান্তি না পায়। বিশেষ করে এই আইনের মাধ্যমে দুদকের যে স্বাধীনতা সেটি খর্ব করা হয়েছিল।