বিয়ের প্রলোভনে শিক্ষক কর্তৃক ধর্ষিত হয়ে ফেসবুকে ওই শিক্ষকের ছবি সংযুক্ত করে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এক কলেজছাত্রী।
শনিবার ভোর ৫টার দিকে জেলার পাকুন্দিয়ায় উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের ষাইটকাহন গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।
শিক্ষকের প্রতারণার শিকার হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ভাইরাল হয়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ওই শিক্ষকের বিচার দাবিতে বিকাল ৪টায় কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের পুলেরঘাট বাজার এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে এলাকাবাসী। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হয়ে ওঠেছে এ ঘটনাটি।
সুমাইয়া (১৯) ষাইটকাহন গ্রামের শামীম আহমেদের মেয়ে এবং কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের বিএসএস প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
পরিবার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে সুমাইয়া উপজেলার কালিয়াচাপড়া চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। সেই সময় জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নোয়াবাদ গ্রামের রহমত আলীর ছেলে কালিয়া চাপড়া চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী শিক্ষক রাসেল আহমেদের কাছে প্রাইভেট পড়তো সে।
প্রাইভেট পড়ার সময় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন শিক্ষক রাসেল আহমেদ খান। দীর্ঘদিন ধরে এ সম্পর্ক চলে আসার সময় বিয়ের প্রলোভনে দৈহিক সম্পর্কও গড়ে তুলেন ওই শিক্ষক।
২০১৯ সালে রাসেল আহমেদ খান ঢাকার একটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে সুমাইয়ার সঙ্গে ভিন্ন রকম আচরণ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত ওই শিক্ষক সম্প্রতি অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করেন।
এ ঘটনার পর প্রতারণার শিকার কলেজ ছাত্রী সুমাইয়া দুঃখ-ক্ষোভ ও অভিমানে শনিবার ভোর ৫টার দিকে আত্মহননের পথ বেছে নেয়।
সে নিজেদের বসত ঘরের ধর্নার সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে।
এর আগে সে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে ওই শিক্ষককের ছবি সংযুক্ত করে স্ট্যাটাস দেয়। স্ট্যাটাসে সে লেখে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিন বছর ধরে ছাত্রীকে ধর্ষণের পর অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ছাত্রীকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা আমার প্রিয় শিক্ষক। আর সেই ভাগ্যবান ছাত্রী আমি নিজে। আল্লাহ আমায় মাফ করো। দেশে এমন শিক্ষক আর কোনো ছাত্রীর জীবনে না আসুক। সবাই আমায় মাফ করবেন। সদ্য এসএসসি পাশ করা একটা মেয়ে বিয়ে মানে এসব জানতামই না। ভদ্র স্যারকে বিশ্বাস করতাম। যা বলতো, তাই শুনতাম। যাই হোক ভাল থাক সে, বিদায়।
এ খবর পেয়ে পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে।
পাকুন্দিয়া থানার ওসি মফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ব্যাপারে আপাতত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তবে ওই কলেজ ছাত্রীর পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে, সুমাইয়ার চাচা মমিনুল হক জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সুমাইয়ার দাফন সম্পন্নের পর থানায় এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হবে।
উৎসঃ যুগান্তর