যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আগামী ২২ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের বিষয়ে টেকসই সহায়তা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। ওই অনুষ্ঠানের সহযোগী দেশ হিসেবে রয়েছে যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা। ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও কী বিষয়ে আলোচনা হবে, সেটি এখনও জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। তবে বাংলাদেশ বিভিন্ন সূত্র থেকে বৈঠক সম্পর্কে যে তথ্য পেয়েছে এবং যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হবে বলে জেনেছে, সে বিষয়ে একমত নয় সরকার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যেটা বলেছে আমরা শুনতে পেলাম, তারা ১০ বছরের মানবিক সাহায্য নিয়ে আলাপ করবে। কিন্তু আমরা এখন এক বছরের জন্য সাহায্য নিচ্ছি। দীর্ঘমেয়াদি বিষয়ে আমাদের কোনও আগ্রহ নেই। আমরা যত দ্রুত সম্ভব, রোহিঙ্গাদের বিদায় করতে চাই।’
বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যাবাসন। ১০ বছরে কে কত টাকা দেবেন, সে বিষয়ে আমরা আগ্রহী নই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা যে বিষয়গুলো বলছেন, সেটি আমাদের সঙ্গে মিলছে না। একটা বলছে, মাল্টি-ইয়ার প্ল্যানিং। কিন্তু আমরা মাল্টি-ইয়ার প্ল্যানিংয়ের বিষয়ে নেই। মাল্টি ইয়ার পরিকল্পনা রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের জন্য। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে আগ্রহী নই।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা বলছেন আঞ্চলিক দেশগুলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবে। কিন্তু আমরা মনে করি, এটি শুধু আঞ্চলিক সমস্যা নয়, বৈশ্বিক সমস্যা এবং সবার এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু তারা বলছে, এটি এই অঞ্চলের মধ্যে থাকলে ভালো।’
সাগরে জাহাজে ভেসে যাওয়া রোহিঙ্গাদের উদ্ধার ও অবতরণ এই অঞ্চলে হবে। অর্থাৎ তাদের কোনও দায়-দায়িত্ব নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটিতেও আমরা বিশ্বাস করি না। এর আগে আমরা ইউরোপিয়ানদের বলেছিলাম—আপনারা নিয়ে যান না কেন, আপনাদের জাহাজ দিয়ে। এই জন্য মনে হয় আমাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দিতে চাচ্ছে।’
ওই বৈঠকে বাংলাদেশ এক নম্বর প্লেয়ার হওয়া উচিত বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত। ওনারা খালি মুখে বলে দিয়েছেন। কিন্তু কী নিয়ে আলাপ করবেন, সেটি আমাদের বিস্তারিত জানাতে হবে এবং সেটি বুঝে আমরা অংশগ্রহণ করবো।’
মিয়ানমার ওই বৈঠকে থাকবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘থাকতে পারে, আমাদের কিছুই জানায়নি।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তা করছি ফেন্সিং দেবো। না দিলে কেমন মারামারি শুরু হয়েছে। ড্রাগসহ অন্যান্য ব্যবসা শুরু হয়েছে। আমাদের ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ভূমিকা
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের রবিবারের (১২ অক্টোবর) বৈঠকের বিষয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘চীন আমাদের মন্ত্রী পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তিন দেশের (বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমার) মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক করেছিলাম। তারা এখন চিন্তা করছে, আপডেটের জন্য আরেকটি একই রকম বৈঠক বেইজিংয়ে করার জন্য।’
প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘চীনের রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে তার দেশের সঙ্গে কথা বলবেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন—আমি যেতে রাজি কিনা। আমি বললাম অবশ্যই, আপনারা মিয়ানমারকে রাজি করান। আমি বললাম, অং সান সুচি ছাড়া এই বৈঠক হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সেটির তারিখ তারা ঠিক করবেন এবং আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি।’
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রত্যাবাসন বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের জীবনমানের উন্নয়ন, কীভাবে তাদের আমাদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, এসব নিয়ে কথাবার্তা বলছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন তারা (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশে থাকতে পারে। আমরা সেটা চাই না। আমরা চাই তারা রাখাইনে ফেরত যাবে এবং সেখানে গিয়ে জীবনমান উন্নত করুক। এই বিষয়ে চীন আমাদের সঙ্গে একমত। প্রথম বিষয় হচ্ছে প্রত্যাবাসন। মিয়ানমার তাদের ফেরত নিচ্ছে না এবং এই বিষয় নিয়ে চীন তাদের সঙ্গে কথা বলবে।’
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন