
অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার সময় রোমানিয়ায় বন্দি মাদারীপুরের পাঁচ যুবক। ১৫ দিন ধরে তাদের একটি ঘরে বন্দি করে রেখেছে মাফিয়া চক্র। তাদের দেওয়া হচ্ছে না একবেলার খাবারও। নিজেদের জীবন নিয়ে আতঙ্কে আটকা পড়া ওই পাঁচ যুবক। সাহায্যের আকুতি চেয়ে মোবাইলে ধারণ করা এমনই একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
রোমানিয়ায় দালাল চক্রের হাতে বন্দিরা হলেন- ডাসার উপজেলার খাতিয়াল গ্রামের মৃত সৈয়দ সালামের ছেলে তানভীর এবং একই গ্রামের সাঈদ হাওলাদারের ছেলে বায়েজিদ হাওলাদার ও রাশেদ হাওলাদার, সদর উপজেলার খোয়াজপুরের মিলন মিয়া ও সিকিনওহাটা গ্রামের মোফাজ্জেল হাওলাদার।
জানা গেছে, তিন মাস আগে মাদারীপুর সদর উপজেলার হাজির হাওলা এলাকার জাফর বেপারীর ছেলে আল আমিনের মাধ্যমে ইতালির উদ্দেশ্যে বের হয় ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের খাতিয়াল গ্রামের মৃত সৈয়দ সালামের ছেলে তানভীর, মিলন, মোফাজ্জেল, রাসেদ, বায়েজিদ সোহাগ, সজিব, ইমন, আবদুল হকসহ বেশ কয়েকজন যুবক।
প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে দালাল চক্রের সক্রিয় সদস্য আল আমিন ৮ লাখ টাকা করে নেয়। অবৈধ পথে রোমানিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার সময় রোমানিয়ায় মাফিয়াদের হাতে আটক হয় তানভীরসহ ৫ জন। পরে পরিবারের কাছে দাবী করা হয় মুক্তিপণের লাখ লাখ টাকা। বর্তমানে একটি কক্ষে ৫ যুবককে ১৫ দিন ধরে আটক করে রেখেছে দালাল চক্রের সিন্ডিকেট। দেওয়া হচ্ছে না একাবেলা খাবারও।
সাহায্যের আকুতি জানিয়ে পরিবারের কাছে একটি ভিডিও পাঠিয়ে ভুক্তভোগী ওই ৫ যুবক। এক মিনিট সাত সেকেন্ডের ওই ভিডিও এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। পরে তানভীরের ছোট ভাই সৈয়দ শাহীদ মাদারীপুর সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছে।
তানভীরের ছোট ভাই সৈয়দ শাহীদ বলেন, আমাদের প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা করে দিয়েছে দালাল চক্র। পরে আমার ভাইসহ অন্যদের আটক করে রেখেছে তারা। এখন মুক্তির জন্য প্রত্যেকের কাছ দাবী করা হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। আমরা এতো টাকা কোথায় পাবো, আগের ৮ লাখ টাকা ম্যানেজ করেছি অনেক কষ্টে। ধার দেনা এখনো শোধ করতে পারিনি। সরকারের কাছে আমার ভাইসহ অন্যদের ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা চাই। পাশাপাশি দালাল চক্রের কঠিন বিচার চাই।
মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি খান মোহাম্মদ শহীদ বলেন, প্রতিবার দালাল চক্র গ্রামের সহজ সরল মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে নেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে তাদের মাঝপথে আটকে রেখে মুক্তিপণের জন্য আদায় করে কয়েক দফা লাখ লাখ টাকা। মানুষ সচেতন না হলেও এভাবে অবৈধ পথে ইতালি যাবার প্রবণতা কমবে না। আর প্রশাসনের উচিৎ দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম মিঞা জানান, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আল আমিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।