টেবিলে টেবিলে সাজানো ইফতার সামগ্রী। বিকেল থেকেই চলে কুরআন তিলাওয়াত ও হামদ না’ত পরিবেশনা। মিলনায়তন ভরা ওলামা-মাশায়েখ আর এতিমেরা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত। নেই শুধু বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
আজ রোববার ০৩ এপ্রিল ২০২২, পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিনে ওলামা-মাশায়েখ ও এতিমদের সম্মানে বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিলে তাই অনেক কিছু থেকেও যেন ছিলো না প্রাণ!
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রয়ারি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলায় কারান্তরীণ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি বছরই প্রথম রোজায় ওলামা-মাশায়েখ ও এতিমদের সম্মানে আয়োজিত ইফতারের শরিক থাকতেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। টেবিল ঘুরে ঘুরে এতিম ছেলে-মেয়ে আর ওলামাদের সাথে কুশল বিনিময় করতেন। দেশ ও জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যও দিতেন তিনি। কিন্তু এ বছরও বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়াই ওলামা-মাশায়েখ ও এতিমদের নিয়ে ইফতার করল বিএনপি। রাজধানীর লেডিস ক্লাবে বিএনপি আয়োজিত ইফতারে তাই শুন্যতা বিরাজ করে।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এতিম শিক্ষার্থীসহ ওলামা-মাশায়েখদের স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিভিন্ন টেবিল ঘুরে আগতদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ইফতার শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিবছরে পহেলা রমজানে আমরা ১৬ কোটি মানুষের প্রিয় মানুষ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ইফতার করেছি। দুর্ভাগ্য আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তিনি আজকে অসুস্থ অবস্থায় গৃহবন্দি রয়েছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব আমাদের কাছে থেকে ৮ হাজার মাইল দুরে নির্বাসিত অবস্থায় রয়েছেন। রমজানে আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারি। তিনি যেন সুস্থ হন। তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে পারি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারি।
রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, পবিত্র রমজানেও শান্তিতে-স্বস্তিতে দিন কাটানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সরকার নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে, অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম রমজানে দ্রব্যমূল্য কমবে। না কমলেও বাড়বে না। কিন্তু প্রত্যেকটি জিনিসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পর আমরা দল ও জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এলপিজি গ্যাসের দাম আবারো বেড়েছে। তারা দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে।
রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থার ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেন আজকে এখানে (ইফতার অনুষ্ঠান) অনেক মেহমান আসতে পারেননি, আলেম-উলামা, মাদ্রাসার ছেলে-মেয়েরা আসতে পারেননি। কারণটা কী? ট্রাফিক জ্যাম। এতো ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম যে, কেউ এসে পৌঁছাতে পারেননি।
ইফতারের ঠিক ১৫ আগে অর্ধেক অতিথি অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছাতে পেরেছেন। বিএনপি মহাসচিব প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যামে আটকে থেকে পরে পথ থেকে মোটর সাইকেলে অনুষ্ঠান স্থলে এসে পৌঁছান।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও ইফতার শুরুর সময়েই অনুষ্ঠান স্থলে এসে পৌঁছান।
তিনি জানান, প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যামে নিজের গাড়ি রাস্তায় রেখে পায়ে হেঁটে আসতে হয়েছে। তেজগাঁও মহিলা এতিমখানা, শান্তিনগর এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা এবং ফার্মগেট মাদ্রাসা এতিম শিক্ষার্থীদেরিএই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ইফতার শুরুর প্রায় ৫ মিনিট পর অনুষ্ঠান স্থলে এসে পৌঁছায়।
ইফতার মাহফিলে অন্যদের মধ্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।