সাতক্ষীরার কলারোয়ায় রাতের আঁধারে ভেঙে সরিয়ে ফেলা হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাতটি ঘর। অনিয়ম ও দুর্নীতি ঢাকতে ঘরগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নের তৈলকুপি গ্রামে কয়েক দিন আগে এ ঘটনা ঘটে।
লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শরিফুল ইসলাম বলেন, রাতের আঁধারে অনেক লোকজন ভেকু মেশিন দিয়ে ঘর ভাঙা শুরু করে। ট্রাকে করে ঘরের ইট ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে যায় তারা। জানালা-দরজাগুলো অন্য একটি ঘরের মধ্যে রাখা হয়। সেদিন ইউএনওর কাছে জানতে চাইলাম কী হচ্ছে এসব? তখন বললেন, এসব ঘরে লোকজনকে থাকলে দিলে প্রাণহানির ভয় আছে। তাই ঘরগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য তৈলকুপি গ্রামে ১৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ঘরের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। হতদরিদ্রদের জন্য এসব ঘর বানানো হলেও বুঝিয়ে দেওয়ার আগে ভেঙে ফেলা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাতের আঁধারে ভেকু মেশিন দিয়ে ঘরগুলো ভেঙে ফেলেন। রাতেই ইটসহ বিভিন্ন মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, খুবই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিদর্শক দল আসার খবরে ঘরগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে।
লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম বলেন, তৈলকুপি গ্রামের খাস জমিতে দুই সারিতে ১৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। এক পাশে সাতটি, অপর পাশে ছয়টি। কিন্তু পাশে পুকুর থেকে বালু তোলায় সাতটি ঘর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য ঘরগুলো ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, ঘরগুলো নির্মাণ করা হয় পুকুরের পাড়ে। দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সদ্য বদলিকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমি জেরিন কান্তা ঘরগুলো নির্মাণ করেন। অল্প দিনের মধ্যে ঘরগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। পুকুর ভরাটের জন্য উপজেলা অফিস থেকে আরও ছয় লাখ টাকা খরচ করা হয়। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। এজন্য ঘরগুলো ভেঙে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন, ঘরগুলো আগের ইউএনও নির্মাণ করেছেন। দুর্নীতি ঢাকতে নয়, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নির্মাণের কারণে ঘরগুলো সরানো হয়েছে।
তিনি বলেন, উপকারভোগীদের ঘরে তোলার আগে ভেঙে গেলে লজ্জাজনক ব্যাপার। এজন্য ঘরগুলো রাতের আঁধারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যে ঘরগুলো আছে, সেগুলো সংস্কার করা হচ্ছে।
ইউএনও জুবায়ের হোসেন বলেন, ঘরগুলো পুকুর পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে পুকুরে প্যালাসাইডিং দিয়ে ঘরগুলো রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাতেও সুফল না পেয়ে উপজেলা পরিষদের সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঘরগুলো ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে ঘরগুলো পুনরায় নির্মাণ করা হবে।
এতে সরকারি অর্থ অপচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বসবাসকারীদের জীবনের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ঘরগুলো সরানো হয়েছে। এখানে অর্থের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি।