মালদ্বীপে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ বাংলাদেশি নাগরিক। আর স্থানীয় নাগরিকদের করোনা আক্রান্তের হার ৪২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। প্রায় ৪ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটিতে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। মালদ্বীপে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৫ জন। এরমধ্যে তিন জন বাংলাদেশি।
মালদ্বীপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, দেশটির নিজস্ব নাগরিকদের তুলনায় সেখানে বসবাসকারী অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মধ্যে করোনা আক্রান্তের হার বেশি। দেশটিতে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯৬৬ জন। এরমধ্যে মারা গেছেন ১৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
মালদ্বীপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সে দেশে ১৩৬৫ জন বাংলাদেশি, ২৪৫ জন ভারতীয়, ৪৬ জন নেপালি, ২৪ জন শ্রীলঙ্কান, ১১ জন ইতালিয়ান, ফিলিপাইনের ৪ জনসহ অন্যান্য দেশের আরও ১২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মালদ্বীপে প্রথম করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় গত ৭ মার্চ। ইতালিয়ান পর্যটকের সংস্পর্শে আসা একটি রিসোর্টের দুই কর্মী প্রথমে আক্রান্ত হন।
মালদ্বীপে থাকা প্রবাসীরা বলছেন, পর্যটননির্ভর এই দেশটিতে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন। শুরুর দিকে পর্যটকদের সংস্পর্শে আসার কারণে বাংলাদেশিদের আক্রান্তের হার বেশি। অন্যদিকে কম বেতনে কাজ করা এই শ্রমিকরা খরচ বাঁচাতে একটি ঘরে একসঙ্গে ২০-২৫ জনও থাকেন। ফলে একজন আক্রান্ত হলে বাকিদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। এছাড়া, কেউ কেউ অসচেতনতার কারণে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে মালদ্বীপে যারা অবৈধভাবে আছেন, তাদের সংকট সবচেয়ে বেশি। অবৈধভাবে বসবাসকারীদের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় না। তবে আক্রান্ত সবাইকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশন সে দেশের সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে।
মালদ্বীপে বাংলাদেশিদের সংগঠন ‘আমরা মালদ্বীপ প্রবাসী জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর সভাপতি আবদুল্লাহ কাদির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবাই দেশে টাকা পাঠানোর জন্য আয় করেন। ফলে কম খরচ করা, বা টাকা বাঁচানোর চেষ্টা সবারই থাকে। মালদ্বীপে বাংলাদেশিদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। কারণ, যেখানে একটা ঘরে ৫/৬ জন থাকার সক্ষমতা রয়েছে, সেখানে ২০-২৫ জন পর্যন্ত থাকেন। আর এখন করোনার কারণে আয়-উপার্জন না থাকায় এখানে টিকে থাকা কঠিন। ফ্লাইট বন্ধ থাকায় চাইলেও দেশেও ফিরে যাওয়া যাচ্ছে না।’
মালদ্বীপে বাংলাদেশ হাইকমিশনার রিয়ার অ্যাডমিরাল নাজমুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রবাসী শ্রমিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। কারণ, তারা অনেকে একসঙ্গে থাকেন। একটি ঘরে অনেক মানুষ থাকলে একজন আক্রান্ত হলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যারা যেখানে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের সেখানে কাছাকাছি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে তাদের খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। হাসপাতালে যাদের ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন সেটাও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে সমস্যায় পড়া বাংলাদেশিদের সহায়তার জন্য মালদ্বীপকে ১০০ টন খাদ্য, ওষুধ ও মেডিক্যাল সামগ্রী হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ সরকার। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল ৪০ টন চাল, ১০ টন আলু, ১০ টন মিষ্টি আলু, ১০ টন মসুর ডাল, পাঁচ টন পেঁয়াজ, পাঁচ টন ডিম এবং পাঁচ টন সবজি। খাদ্য ছাড়াও ওষুধ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পিপিএ ও মাস্কও পাঠানো হয়েছে। ওই পণ্যসামগ্রী নিয়ে নৌবাহিনীর একটি জাহাজ মালদ্বীপে যায় এবং গত ২২ এপ্রিল তা হস্তান্তর করা হয়।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন