তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চিকরাইল এলাকার একটি মাঠের গর্ত থেকে রেডিও কলারসহ মেছো বিড়ালের হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে।
মেছো বিড়ালটি পুকুর ও খামারের মাছ খায় এবং বাড়ির হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে যায়—দীর্ঘদিন ধরে এমন অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের। এটি শুকনা মৌসুমে হাওরে থাকলেও বর্ষাকালে কোথায় থাকে, তা কেউ জানেন না। এ বিষয়ে তথ্য জানতে মেছো বিড়ালটিকে ‘রেডিও কলার’ পরানো হয়েছিল। কিন্তু তথ্য পাওয়ার আগেই এটি চিরবিদায় নিয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চিকরাইল এলাকার একটি মাঠের গর্ত থেকে রেডিও কলারসহ মেছো বিড়ালের হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার হাইল হাওরসংলগ্ন স্থানে ‘রেডিও কলার’ পরানো অবস্থায় মেছো বিড়ালটি অবমুক্ত করা হয়। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেছো বিড়ালটি অবমুক্তির পর থেকেই নিয়মিতভাবে স্যাটেলাইট ও রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে এর গতিবিধি ও অন্যান্য কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল সুন্দর ভাবে। ১৯ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা প্রাণীটির চলাফেরার কোনো সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন গবেষক দলের অনুরোধে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের একটি দল ২০ এপ্রিল বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেছো বিড়ালের বিচরণ এলাকা হাইল হাওরসংলগ্ন চিকরাইলে অনুসন্ধান চালানো হয়। কয়েক দিন ওই এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুঁজি করেও মেছো বিড়ালের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। এ দিকে মেছো বিড়ালটির চলাফেরার জিপিএস/স্যাটেলাইট সিগন্যালও মেলেনি।
পরে ২৮ এপ্রিল সকালে গবেষক দলের প্রতিনিধিসহ বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের একটি দল চিকরাইল এলাকায় তল্লাশি করে ভিএইচএফ অ্যানটেনার মাধ্যমে রেডিও কলারের সিগন্যাল পায় মেছো বিড়ালটির। সিগন্যাল অনুসরণ করে চিকরাইল গ্রামের রাস্তার পাশের একটি খালি জমিতে গর্ত পাওয়া যায়। গর্তের পাশে মেছো বিড়ালের বেশ কিছু হাড়গোড় ও লোম পড়েছিল। গর্তের মাটি সরিয়ে রেডিও কলারসহ মেছো বিড়ালের মাথার খুলি, গলা ও মেরুদণ্ডের হাড়, পায়ের নখসহ আরও বেশ কিছু হাড় পাওয়া যায়।
গত ২৬ মার্চ মৌলভীবাজারের বর্ষিজোড়ায় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অবমুক্তির আগে রেডিও কলার পরানো মেছো বিড়ালটি। গত ২৬ মার্চ মৌলভীবাজারের বর্ষিজোড়ায় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার
এ ঘটনায় ২৮ এপ্রিল বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারওয়ার সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে বলা হয়েছে, মেছো বিড়াল হত্যা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২-এর ৩৪ (খ) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মেছো বিড়াল প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে প্রাণীটি। লোকজন প্রায়ই এই প্রাণীকে মেরে ফেলার কারণে এরা সংখ্যায় একেবারে কমে বিলুপ্তির দিকে প্রায়। মানুষ-মেছো বিড়াল সংঘাত নিরসনে মেছো বিড়ালের ওপর চলমান গবেষণাটি খুবই দরকারি ছিল।
সারা বিশ্বে মেছো বিড়াল (মেছো বাঘ) এখন সংকটাপন্ন প্রাণী। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) মেছো বিড়ালকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে।
মৌলভীবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারওয়ার বলেন, ‘কে বা কারা ফাঁদ দিয়ে মেছো বিড়ালটিকে ধরে মেরে ফেলে ফাঁকা জমিনের গর্তে পুঁতে রেখেছিল। কিন্তু কারা করেছে, এ বিষয়ে কারও সংশ্লিষ্টতা মেলেনি। রেডিও কলারটি অ্যাকটিভ ছিল। পাবলিক হয়তো মনে করেছে, এটা সাধারণ কোনো কিছু।’
মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি তদন্তের পর্যায়ে আছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।