
আন্তর্জাতিক ডেস্ক- বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)- কে নিয়ে বিদ্রূপাত্মক কার্টুন ও অবমাননার ঘটনায় মুসলিম বিশ্বে যখন প্রতিবাদ ও ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক জোরদার হচ্ছে, তখন ভারতে সামাজিকমাধ্যমের হ্যাশট্যাগে তার উল্টো চিত্রই দেখা যাচ্ছে।
সোম ও মঙ্গলবার দেশটিতে টুইটারে ‘হ্যাশট্যাগ আইস্ট্যান্ড উইথ ফ্রান্স’ ও ‘উই স্ট্যান্ড উইথ ফ্রান্স’ সর্বোচ্চ ট্রেন্ড হিসেবে দেখা গেছে। হাজার হাজার ভারতীয় ফ্রান্সের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সামাজিকমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ বার্তা দিয়েছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডে ও আলজাজিরার খবরে এমন তথ্য মিলেছে। ফরাসি মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগ তোলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। আর বিশ্বজুড়ে ইসলাম সংকটে আছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়াও শ্রেণিকক্ষে মহানবীর (সা.) কার্টুন প্রদর্শনের জেরে এক শিক্ষককে হত্যার ঘটনার পর ম্যাক্রন ইসলাম বিদ্বেষকে আরও উসকে দেন। এতে সারা বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তুরস্ক, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশে ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে। রাজধানী থেকে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারেরও দাবি তুলেছেন মুসলমানরা। কিন্তু এসব কিছুর বিপরীতে গিয়ে ভারতে প্রকাশ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্টের প্রতি সমর্থন দিতে দেখা গেছে।
বিজেপির পার্লামেন্ট সদস্য প্রভাষ সাহিব সিং এক টুইটবার্তায় বলেন, সহনশীলতাও ধর্মনিরপেক্ষা হওয়া উচিত। আমরা ফ্রান্সের সঙ্গে আছি। ভালো করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। চলতি বছরের শুরুতে পাঁচটি ফ্রান্সের নির্মিত রাফায়েল যুদ্ধ বিমান পেয়েছে ভারত। এই বিতর্কিত ৯৪০ কোটি ডলারের চুক্তি ২০১৬ সালে প্রথম সই হয়েছিল।
পলাশ মন্ডল নামের এক টুইটার ব্যবহারকারী বলেন, ম্যাক্রন স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা। পুরো ভারত আপনার সঙ্গে আছে। কেউ কেউ ম্যাক্রনকে ‘মানবতার সুরক্ষাকারী’ আখ্যা দিয়ে তাকে প্রশংসায়ও ভাসিয়েছেন। তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী এমনটিই হওয়া উচিত। এদিকে ম্যাক্রনের মানসিক চিকিৎসা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন তুর্কিশ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তিনি বলেন, যখন কোনো রাষ্ট্রপ্রধান ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না এবং তার দেশে বাস করা কয়েক লাখ মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, তখন এছাড়া আর কি-ই-বা বলার আছে। এরদোগানের মুখে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কড়া সমালোচনার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, ফ্রান্স তুরস্কে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেয়। যার জাবাবে এরদোয়ান তুর্কিদের ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দেন।
এরদোয়ানের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও ম্যাক্রোঁ কঠোর সমালোচনা করে বলেন, নবী মুহাম্মদের (সা.) ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শনকে উৎসাহিত করে ম্যাক্রোঁ ‘ইসলামকে আক্রমণ’ করছেন। ইরানও এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সৌদি আরব মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যাঙ্গচিত্র আঁকা নিয়ে সমালোচনা করেছে। যদিও তারা ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়ার পক্ষে নয়। এদিকে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এর কার্টুন নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে ফ্রান্স তাদের নাগরিকদের মুসলিম অধ্যুষিত কয়েকটি দেশে বসবাস কিংবা ভ্রমণ করার ব্যাপারে সাবধান করে দিয়ে বাড়তি পূর্বসতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ইরাক ও মৌরিতানিয়ায় বাস করা ফরাসি নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, তাদের মুহাম্মদ (সা.) এর কার্টুনের বিরুদ্ধে যে কোনও বিক্ষোভ এবং সব ধরনের জমায়েত এড়িয়ে চলার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। নির্দেশনামায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে এবং পর্যটক ও পরবাসী সমাগমের জায়গাগুলোতে ফরাসি নাগরিকদের বিশেষভাবে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তুরস্কের ফরাসি দূতাবাস থেকেও সে দেশে বসবাসরত নাগরিকদের জন্য একই ধরনের সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।