মোঃ রাসেল ইসলাম ,যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ শীতের বিদায় ঘণ্টা বাজার পরপরই বেনাপোলে শুরু হতে থাকে মশার উৎপাত। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ বেনাপোল বাসী। আর গত ৫-৭ দিনের থেমে থেমে সামান্য বৃষ্টিতে এর মাত্রা আরও ছাড়িয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে পৌর ও ইউনিয়নবাসীর মনে ছড়িয়েছে পুরোনো ডেঙ্গু আতঙ্কও। তবে, বেনাপোল পৌরসভা থেকে বলা হয়েছে, এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসসহ মশন নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
গত বছরের এই সময়ে রাজধানী ঢাকাতে এডিস মশার উৎপাত বাড়ে। জুন-জুলাই মাসে এর ব্যাপকতা আরও বেড়ে গিয়ে প্রাণঘাতী ডেঙ্গু ছড়াতে থাকে, রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। গ্রাম-শহরের অনেক মানুষের মৃত্যু হলেও সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থা হয় রাজধানী ঢাকায়। ঢাকাসহ জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট খুলতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, গেলো বছর দেশে এক লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও ১৩৩ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন বলে জানায় আইইডিসিআর। ফলে, চলতি বছর মশার উৎপাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বেনাপোল পৌরসভা বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্ধ্যার পরপরই মশার উৎপাত বাড়ে। কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করলেও মশা যায় না। বাধ্য হয়ে মশারি টাঙাতে হয়। এতে বাসায় চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি হয়।
ভবারবেড় এলাকায় আল আমিন বলেন, ‘সন্ধ্যার পরপরই বাসায় মশার উৎপাত বাড়ে। রাতভর মশা আর ডেঙ্গু আতঙ্কে কাটাতে হয়। মশার স্পে ও কয়েল কোনো কাজে আসে না। ’
আল-আমিনের মতো একই অভিজ্ঞতার কথা জানান কাগজপুকুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম, ছোট আচঁড়ার ইশরাত সুলতানা, নামাজ গ্রামের জাকির হোসেন , বেনাপোলের আসাদুজ্জামান রিপন,আবুল কালাম, ইদ্রিস আলম, বড়আঁচড়ার সাগর হোসেন, সাদিপুর গ্রামের জমির হোসেন। এজন্য তারা মশক নিধনে বেনাপোল পৌরসভা ও বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন।
দূর্গাপুর গ্রামের মিরাজ বলেন, এবছরও তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। বেনাপোল পৌরসভা যদি তারা ঠিকভাবে কাজ করতো, তাহলে মশার উৎপাত এত বাড়তো না।’
দিঘিরপাড় গ্রামের মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মশার উৎপাত বাড়ায় ছেলে-মেয়ে ঠিক মতো পড়ার টেবিলে বসতে পারে না। এতে তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে বেনাপোলে বসবাস করা কঠিন হয়ে যাবে।’
এদিকে, শার্শা উপজেলা কীটতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু নির্মূলে শুধু একটি মৌসুম নয়, সারা বছর কাজ করতে হবে। তা না হলে এডিসসহ অন্যান্য মশা থেকে বাঁচা সম্ভব হবে না।এডিস মশা প্রতিকূল পরিবেশেও ডিম ছাড়তে পারে। ডিমগুলো অনেক দিন টিকে থাকতে পারে। পানির স্পর্শ পেলেই এগুলো থেকে লার্ভা হয়। ওইসব মশক নিধন কার্যক্রম জোরদারসহ এসকল এলাকায় কাজ করতে হবে। ’
বেনাপোল পৌরসভার সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যেসব ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত কার্যক্রম চলছে।’ যেহেতু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, এজন্য এখন মশক নিধনের ঔষধ ছিটানোর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কারণ বৃষ্টির ভিতর ঔষধ ছিটালে ওষুধের কার্যকারিতা থাকেনা। বৃষ্টি কমে গেলে ওষুধ ছিটানোর কাজ অব্যাহত থাকবে। এগুলো মনিটরিং করার জন্যও টিম করে দেওয়া হয়েছে।’ মশা নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের কার্যক্রম চালানো হবে বলেও তিনি জানান।
বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বজলুর রহমান বলেন ইতিমধ্যে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছে।আগামী ১লা জুন থেকে মশক নিধনের স্প্রে করা হবে। বেনাপোল ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আমাদেরকে জানান।