দুই বছর ধরে নিখোঁজ এক তরুণীর ওপর অমানসিক যৌন নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এই ভিডিও সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিফাজুল ইসলাম হৃদয় নামের এক নির্যাতনকারীকে শনাক্ত করেছে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ।
রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় তার বাসা। সে এলাকায় টিকটক হৃদয় বাবু নামে পরিচিত। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ভারতের কেরালায় সে এবং তার বন্ধুরা মিলে ওই তরুণীকে নির্যাতন করেছে। সে (হৃদয়) এখন ভারতের পুনেতে অবস্থান করছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পুলিশের ধারণা, ওই তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতে পাচার করা হয়েছে। সেখানে তাকে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। পাচার এবং নির্যাতনের ঘটনায় হৃদয় এবং তার বন্ধুরা জড়িত। হৃদয়ের বাসা তল্লাশি করে জাতীয় পরিচয়পত্র, জেএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র এবং রেজিস্ট্রেশন কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। হৃদয়ের বন্ধুদের শনাক্তের পাশাপাশি তারা ভারতীয় নাকি বাংলাদেশি সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ওই তরুণীর বাবা বৃহস্পতিবার হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বিবস্ত্র করে ৩/৪ জন যুবক এবং এক নারী নির্মম নির্যাতন করছে ওই তরুণীকে। পাচারকারী চক্রের সদস্যরা ওই তরুণীর ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছে যা আধারকার্ড নামে পরিচিত। এই চক্রের সদস্যরা অন্য আরও কোনো নারীকে পাচার করেছে কি না, এ বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র ওই তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিদেশে পাচার করেছে। এই ঘটনা তদন্তে ভারতীয় পুলিশ এবং ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে। পাশাপাশি ভুক্তভোগী তরুণীকে উদ্ধার এবং জড়িতদের গ্রেফতারে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তেজগাঁও বিভাগের এডিসি হাফিজ আল ফারুক যুগান্তরকে বলেন, কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে অমানসিক শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। সাইবার প্যাট্রোলিংয়ের অংশ হিসেবে ভিডিওটি আমাদের নজরে আসে। ভিডিওটিতে যৌন নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে হাতিরঝিলের নয়াটোলার এক যুবকের ফেসবুক আইডির ছবির মিল পাওয়া যায়। এই তথ্যের সূত্র ধরে ওই যুবকের সঠিক নাম ও ঠিকানা শনাক্ত করা হয়। পরে ওই যুবকের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে শনাক্ত ব্যক্তিটিই নির্যাতনকারীদের একজন।
ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ওই তরুণীর বয়স ২৩ বছর। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এ কারণে তৃতীয় শ্রেণির পর আর লেখাপড়া হয়নি। গ্রামের বাড়ি ঢাকা বিভাগের একটি জেলায়। প্রেমের সম্পর্কের জেরে ২০১৪ সালে তার বিয়ে হয়। তার স্বামী কুয়েত প্রবাসী। শ্বশুর বাড়ির লোক তার ওপর অত্যাচার করতো। এ কারণে বিয়ের পর বাবার বাড়িতেই থাকতেন তিনি। আর্থিক অনটনের কথা চিন্তা করে তিনি সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি এক দালালকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে প্রতারিত হন। এ ঘটনার পর ওই তরুণী কাউকে কিছু না জানিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। তারপর পরিবার আর তার খোঁজ পায়নি। তার চার বছরের একটি শিশু সন্তান আছে।
শনাক্ত হওয়া নির্যতনকারী সম্পর্কে পুলিশ জানায়, তার নাম রিফাজুল ইসলাম হৃদয় (২৬)। বাবার নাম আবুল হোসেন। মায়ের নাম মিনু আক্তার। হাতিরঝিল থানাধীন নয়াটোলার বৌবাজারের ৫২৭/৬ নম্বর বাসায় পরিবারের সঙ্গেই হৃদয় বসবাস করতো। এলাকায় সে টিকটক হৃদয় বাবু নামে পরিচিত। সে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। হৃদয় বাবু কোনো কাজ করতো না। সারাদিন বন্ধুদের নিয়ে টিকটক ভিডিও তৈরি করতো। চার মাস আগে সে ভারতে চলে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে রমনা থানায় ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা আছে। পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছে, হৃদয়ের সঙ্গে তার পরিবারের যোগাযোগ নেই।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, হৃদয়ের অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হতে কৌশলে তার মামার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হয়। তখন সে জানায়, তিন মাস আগে সে ভারতে গেছে। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ঘটেছে ১৫-১৬ দিন আগে। ভুক্তভোগী তরুণী বাংলাদেশি। ওই তরুণীর বাসা হাতিরঝিল থানা এলাকায়। ওই তরুণীর বিস্তারিত পরিচয় জানতে চাইলে সে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভারতীয় পরিচয়পত্র পাঠায় যা আধার কার্ড নামে পরিচিত। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবারের সন্ধান মিলেছে।
উৎসঃ যুগান্তর