আরটি-পিসিআর পরীক্ষার কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ নিয়ে বিদেশে গেলে সমস্যার সমাধান হবে না। সনদ কেনার চেয়েও বড় লজ্জায় পড়তে হতে পারে। কারণ, প্রচলিত পিসিআর পরীক্ষা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ এবং পরীক্ষার ফল পাওয়ার মধ্যবর্তী সময়েও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পিসিআর পরীক্ষাও করা হোক এবং সেই পরীক্ষার নেগেটিভ সনদও যাত্রীদের সঙ্গে থাকুক। কিন্তু, বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় সর্বশেষে যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা করাটাও অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে সরকার চাইলে বিদেশগামী যাত্রীদের দ্রুত শনাক্তকরণে নিজেদের কিট, খরচ ও লোকবল দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। যাতে বিদেশগামীরা বিমানবন্দর থেকেই দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্ভুল সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশে যেতে পারেন এবং দেশের ভাবমূর্তি বজায় থাকে।
আজ সোমবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং ‘জিআর কোভিড-১৯ র্যাপিড টেস্ট’ কিটের উদ্ভাবক বিজ্ঞানী-গবেষক ড. বিজন কুমার শীল দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের একেক পর এক ভুল সিদ্ধান্ত দেখছি, আর হাসপাতালে শুয়ে কষ্ট পাচ্ছি। আমার কষ্টের মূল কারণ অসুখ না। এর মূল কারণ— সরকারের ভুল উদ্যোগ। যতই চেষ্টা করছি, কোনোভাবেই সরকারকে ভুল পথ থেকে সরানো যাচ্ছে না। সরকারের ভেতরে শুভবুদ্ধির উদয় হচ্ছে না। এটা হওয়া খুব জরুরি। গণস্বাস্থ্যের যে কিট দেশীয় বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করলেন, সেই কিট যদি এতদিনে অনুমোদন পেত, আমরা বিমানবন্দরে যাত্রীদের পরীক্ষা করে শনাক্ত করে দিতে পারতাম যে, কার করোনা আছে, কার নেই। কে বিদেশ যেতে পারবে, কে এখন যেতে পারবে না। একেকজন যাত্রীর পরীক্ষা করতে সর্বোচ্চ তিন থেকে পাঁচ মিনিট সময় লাগবে। কিন্তু, আমরা দীর্ঘসূত্রিতার জালে আটকে গেলাম।’
এর পরিণতিতে কী হলো? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রবাসীরা পাঁচ, ১০ বা ২০ হাজার টাকায় করোনার জাল সার্টিফিকেট কিনে বিদেশে গেলেন এবং সেখানে গিয়ে তাদের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হলো। দেশে করোনার পরীক্ষা নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে— আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ফলাও করে এমন সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে বেশি লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।’
পৃথিবীর কোনো পরীক্ষাই শতভাগ সফল ফল দেয় না উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘পিসিআর পরীক্ষাতেও কমবেশি ৩০ শতাংশ ভুল ফল আসে। সেই তুলনায় আমাদের অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি কিটে ভুল আসার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) যে পদ্ধতিতে আমাদের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করল, আর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) আমব্রেলা গাইডলাইন অনুযায়ী যে মূল্যায়ন করল, দুটির মধ্যে কোনো মিল থাকল না। এ মিল না থাকার পরিণতিতে দেশের উদ্ভাবিত কিট এখন পর্যন্ত অনুমোদন পেল না। এখন আবারও আমাদের পরীক্ষা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন সরকার বলছে, প্রবাসীরা দেশের বাইরে যাওয়ার সময় কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিতে হবে এবং সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে এটি নিতে হবে। এতে সমস্যার সমাধান তো হবেই না, উল্টো আরও অনিয়ম-দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রিতা ও হয়রানি বাড়বে। ধরুন, একজন মানুষ যে আজ নমুনা পরীক্ষা করতে দিলেন, তিনি সরকারের প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষার ফল পাবেন পাঁচ, সাত, ১০ বা ১৫ দিন পরে। এখন নমুনা দেওয়ার দিন হয়তো তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। কিন্তু, মাঝে যে এই ১০-১৫ দিন সময় অতিবাহিত হলো? এই ১০-১৫ দিনের মধ্যে যে কোনো দিনই তো তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
‘তাহলে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে বাংলাদেশের একজন মানুষ যদি বিদেশে যায় এবং সেই দেশের বিমানবন্দরে যখন আবার পরীক্ষা করা হবে, তখন তার কোভিড-১৯ পজিটিভ আসতে পারে। তখন কী প্রমাণ হবে? তখন প্রমাণ হবে, বাংলাদেশের সরকার যে সার্টিফিকেট দিয়েছে, সেই সার্টিফিকেটও ভুল। অর্থাৎ, সরকারের পরীক্ষা ব্যবস্থার পদ্ধতিও ঠিক নেই। এখন আমাদের লজ্জার কারণ, দেশে করোনা পরীক্ষার জাল সার্টিফিকেটের ব্যবসা হচ্ছে। আর সরকারের প্রতিষ্ঠান থেকে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদেরও যদি বিদেশে যাওয়ার পর পরীক্ষায় পজিটিভ আসে, তাহলে সামগ্রিকভাবে সরকারি ব্যবস্থাপনা বড় রকমের প্রশ্নের মুখে পড়বে। সারা পৃথিবীতে আমাদের মান-সম্মান আরও বড়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশ্বাসযোগ্যতা বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না।’, বলেন তিনি।
ইতোমধ্যে পৃথিবীর বড় একটি অংশ থেকে আমরা সাময়িকভাবে হলেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি বলে মন্তব্য করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘কেউ এখন আর আমাদেরকে বিশ্বাস করছে না। প্রতিদিন যে স্বাস্থ্য বুলেটিন দেওয়া হচ্ছে, দেশের মানুষের কাছে সেটির বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আমরা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেললাম। একটা দেশের জন্য এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।’
এর থেকে মুক্তির উপায় কী? জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সরকারকে প্রস্তাব দিচ্ছি, সরকার যদি লিখিতভাবে দিতে বলে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তাও দেবো যে— আর সময়ক্ষেপণ করবেন না, আর আমাদেরকে দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে ফেলবেন না। বাণিজ্য বা লাভের জন্য আমরা কিছু করছি না। আমরা দেশ ও দেশের মানুষের উপকারের জন্য কাজটি করতে চাচ্ছি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিটের দ্রুত গতিতে অনুমোদন দেন। আবার যদি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হয়, সেটাও দ্রুতগতিতে করে অনুমোদনের ব্যবস্থা করুন। তাহলে আমরা নিজেদের উদ্যোগে, নিজেদের খরচে, নিজেদের লোকবল দিয়ে বিমানবন্দরে বিদেশগামী যত যাত্রী আছে, তাদের সবার পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেবো। সরকার যদি আন্তরিক হয়, আমাদেরকে সহযোগিতা করে, তাহলে আমরা অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদেশ থেকে কাঁচামাল এনে কিট উৎপাদন করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারব। এখানে দরকার শুধু সরকারি পর্যায়ের বাধা দূর করে আমাদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।’
‘এমনিতেই দেশের বাইরে আমাদের যে এক কোটিরও বেশি মানুষ আছেন, তাদের বড় অংশ এখন বিপদে আছেন। বিদেশে যারা অবস্থান করছেন, তাদের অনেকেই কাজ হারিয়ে বিপদে রয়েছেন। এখন দেশে এসে যারা আটকা পড়েছেন, তারাও যদি কর্মস্থলে ফিরতে না পারেন, তাহলে সেই বিপদ তো আরও বাড়বে। তাদের যাওয়ার পথ সুগম রাখার জন্য করোনার বিশ্বাসযোগ্য পরীক্ষা করাটা অত্যন্ত জরুরি। এই কাজটি করে সরকার ও দেশের মানুষকে কার্যকরভাবে সহায়তা করতে পারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আমরা প্রত্যাশা করছি, সরকার আর সময়ক্ষেপণ না করে আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করবে। ইচ্ছে করলে এখনই আমরা লিখিত প্রস্তাব দিতে পারি। কিন্তু, আমাদের কোনো প্রস্তাবই যেহেতু গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয় না, সে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে যদি বলা হয়, আপনারা কী করবেন লিখিত প্রস্তাব দেন, তাহলে আমরা বেশি উৎসাহিত হব। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ দেখতে চাই’, বলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি, সরকার এখন র্যাপিড টেস্টের অনুমোদন দেওয়ার কথা ভাবছে। বিদেশ থেকে র্যাপিড টেস্টের কিট কিনে আনা বহু প্রতিষ্ঠানের কথা আমরা জানছি। র্যাপিড টেস্টের অনুমোদন দেওয়ার ভাবনাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু, কিট কোথা থেকে আসবে? কোন দেশ থেকে আনা হবে? কারা কিট আমদানি করবে? এই কিটের মান কেমন হবে? সেটা কে যাচাই করবে? বিদেশ থেকে আনা মানেই তো ভালো ও মানসম্পন্ন কিট নয়। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ কিট কিনে এনে নিজস্ব পদ্ধতিতে যাচাই করে। কার্যকারিতা প্রমাণের পর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। আজকে বাংলাদেশ সরকার যদি র্যাপিড টেস্ট কিট বিদেশ থেকে আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলে সেটা কে যাচাই করবে? কতদিনে যাচাই করবে?’
‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট যাচাই করতে যে পরিমাণ সময় নেওয়া হয়েছে এবং এখনো নেওয়া হচ্ছে, আমদানি করা কিটের ক্ষেত্রের কি এই প্রক্রিয়াই অনুসরণ করা হবে? এই প্রক্রিয়ায় যাচাই করা হবে? নাকি বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা হচ্ছে বলে সেটাকে ভালো বলে ধরে নেওয়া হবে? পৃথিবীর অনেক দেশই তো অন্য জায়গা থেকে কিট কিনে এনে বিপদে পড়েছে। দেখা গেছে সেগুলো নিম্নমানের কিট ছিল। এই উদাহরণ আমাদের আশেপাশে বহু আছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানে দেশীয় বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত কিটকে দীর্ঘসূত্রিতার বেড়াজালে ফেলে কেন আমরা আমদানির দিকে যাব? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি খুঁজে পাচ্ছি না’, যোগ করেন তিনি।
সবশেষে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘হাসপাতালে আছি। এখনো অসুস্থ। পুরোপুরি সুস্থ হইনি। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন চিঠি চালাচালি করছে। একজন আরেকজনের ওপর দায় চাপাচ্ছে। নিজেরা প্রতারক তৈরি করে এখন সেই প্রতারকদের পেছনে সময় ব্যয় করছে।’
‘দেশ ও দেশের মানুষের জন্য খুব বেশি কিছু করতে পারছি না। কিন্তু, ভেতরে একটা কষ্ট-বেদনা উপলব্ধি করছি যে, আমাদের অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল, সামর্থ্য ছিল। সরকারের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আপনারা এইভাবে কাজের গতি কমিয়ে দেবেন না, আটকে দেবেন না। বাধা দূর করে দেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে কাজ করতে দেন। দেশীয় বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করুন। এটি মানুষের উপকারে কাজে লাগাতে দেন’, বলেন তিনি।
বিজ্ঞানী-গবেষক ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘পিসিআর পরীক্ষা সময়সাপেক্ষ হওয়ার কারণে, এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে পাওয়া নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশে যাওয়াটা সম্পূর্ণরূপে একটা ভুল সিদ্ধান্ত। এটা কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত না। কারণ, আজকে যিনি নমুনা দিলেন, পাঁচ, সাত বা ১০ দিন পর যখন তিনি ফল পাবেন, তখন যদি নেগেটিভ আসে, তাহলেও এর মাঝে যে সময়টা গেল, এর মধ্যেই তো তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে একজন যখন বিদেশে যাবেন এবং সেই দেশের তাৎক্ষণিক পরীক্ষায় যদি তার করোনা শনাক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটিও ফলস রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হবে। তখন সেটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক হবে। তাহলে করণীয় কী?’
‘এক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে— বিদেশ ভ্রমণ বা বিদেশে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া দরকার অ্যান্টিবডি কিট দিয়ে অ্যান্টিবডি টেস্টকে। এই টেস্ট করার সামর্থ্য আমাদের আছে। আমার ধারণা, বাংলাদেশের বহুসংখ্যক মানুষের শরীরে ইতোমধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। সেটা যদি আমরা পরীক্ষা করে শনাক্ত করে সার্টিফিকেট দিতে পারি, তাহলে সেই সার্টিফিকেট নিয়ে তিনি খুব সহজে পৃথিবীর যে কোনো দেশে নির্দ্বিধায় ভ্রমণ করতে পারবেন। সেটা হতে পারে ‘ইমিউন ট্রাভেল পাসপোর্ট’। তাকে কেউ সংক্রমিত করতে পারত না বা তার দ্বারাও কেউ সংক্রমিত হত না। এই তথ্য পৃথিবীর সব দেশই জানে। তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরেই এই কাজটি করে দেওয়া সম্ভব। সেই সামর্থ্য আমাদের আছে’, বলেন ড. বিজন।
কিন্তু, যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি, এমন বহু মানুষও তো আছেন। তারাও বিদেশে কাজ করেন এবং এই মুহূর্তে বিদেশে যাওয়া দরকার। তাদের ক্ষেত্রে করণীয় কী হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরও উপায় আছে। আমাদের অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে অ্যালাইজা টেস্ট করে তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব যে, তার শরীরে করোনাভাইরাস আছে কি না। এই কাজটিও বিমানবন্দরেই করা সম্ভব।’
প্রতিদিন ১০-২০ হাজার মানুষ বিমানবন্দর দিয়ে যাবেন এবং তাদের সবার পরীক্ষা করতে হবে, এর জন্য যে পরিমাণ কিট বা যে পরিমাণ লোকবল দরকার, সেই সামর্থ্য কি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আছে? জানতে চাইলে ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের কাঁচামাল আমদানির তাৎক্ষণিক অনুমতি দেয়, তাহলে আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাঁচামাল আমদানি করে কিট উৎপাদন করতে পারব। যদি অনুমতি দেয়, সেই কিট দিয়েই তো আমরা পরীক্ষা করতে পারব। প্রথমত, আমাদের পরীক্ষা করে দেওয়ার সক্ষমতা আছে। দ্বিতীয়ত, এই পরীক্ষা করার জন্য যে মানের লোকবল দরকার, সেই মানের লোকবল তৈরি করতে আমাদের এক থেকে দুই দিন সময় লাগবে। প্রয়োজনে আমাদের গণস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক দিনের মধ্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আমরা এই পরীক্ষার কাজে লাগাতে পারব। আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতি তো অত্যন্ত সহজ।’
‘সুতরাং, সব ধরনের সামর্থ্য আমাদের আছে। বাংলাদেশের বিমানবন্দর দিয়ে যত মানুষ যাবে, তাদের সবার পরীক্ষা করার সামর্থ্য আমাদের আছে। এক্ষেত্রে সরকার যদি আমাদের সামর্থ্য বা দক্ষতা কাজে লাগাতে চায়, তাহলে আমরা সেই জায়গা থেকে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে বসে আছি। এটা যদি করা হয়, তাহলে আজকে ইতালিসহ পৃথিবীর মুখে আমরা যে লজ্জা ও অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে পড়েছি, তা থেকে রক্ষা পাব। আমরা সরকারের দিকে চেয়ে আছি। সরকার যদি আমাদেরকে কাজে লাগাতে চায়, তাহলে আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত আছি। কোনো বাণিজ্য বা লাভের জন্য নয়, দেশের মানুষের উপকারের জন্য আমরা কাজ করতে চাই। সরকার চাইলেই আমরা কাজটি করতে পারি’, যোগ করেন ড. বিজন কুমার শীল।