
১৫ একর মৎস্য ঘেরের খামারের বেড়ি-বাঁধে আড়াই হাজারের মত খেজুরগাছ রয়েছে জাকিরের। দুই বছরেই ফল এসেছে অনেক গাছে। ইতোমধ্যে আগস্ট মাসে প্রথম একটি গাছ থেকে ফল কেটেছেন তিনি।
খেজুর চাষি জাকির হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে ১৫ একর জমিতে ৯টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করি। পুকুরের পাড় জুড়ে বিভিন্ন ফলজ গাছও রোপণ করি। কিন্তু লবণ পানির জন্য এসব ফসলে লাভ হচ্ছিল না। অন্যদিকে অতিরিক্ত লবণ পানির কারণে ঘেরে গলদা চিংড়ি বা কার্প জাতীয় মাছ ভাল হয় না। তারপরে কয়েক বছরে বাগদা চিংড়িতেও লোকসানে পড়ি। পরে হতাশা কাটিয়ে উঠতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রামপাল সৌদি খেজুর বাগান নাম দিয়ে এ খেজুর চাষ শুরু করি। প্রথম দিকে লোকজন আমাকে পাগল বলতো। ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ২০০ সৌদি খেজুরের চারা এনে রোপণ করি। পরবর্তীতে নরসিংদী থেকে আরও ১০০ চারা আনি। বর্তমানে আমার আজোয়, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার ও বারহি এ পাঁচ জাতের আড়াই হাজারের মতো খেজুর চারা রয়েছে। এছাড়াও বিচির তৈরি আরও ২৫০০ চারা প্রস্তুত রয়েছে নার্সারিতে। চলতি বছর ৫০টি গাছে ফলন হলেও আগামী এক বছরের মধ্যে বাগানের অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ গাছে খেজুর হওয়া শুরু করবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
তিনি জানান, খেজুরের পাশাপাশি ভিয়েতনামি নারকেল, কয়েক প্রজাতির আম, আমড়া, মাল্টাসহ বেশকিছু ফলের চাষ করছেন তিনি। তার খামারে রয়েছে ৩০টি দেশি গরু।
নতুনদের উদ্দেশে জাকির হোসেনের পরামর্শ দেন, কলম এবং বীজ দুইভাবেই সৌদি খেজুরের চারা তৈরি হয়। তবে বীজের চারার বেশিরভাগ পুরুষ হয়ে যায়। যার ফলে ফল আসে না। তাই নতুন যারা শুরু করবে তাদেরকে কলম (অপ শুট)‘র চারা ক্রয়ের জন্য পরামর্শ দেন তিনি।
জাকির হোসেন আরও বলেন, আমার এখানে এখন সার্বক্ষণিক তিনজন কর্মচারি রয়েছে। ভবিষ্যতে এ নার্সারিতে আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে আশা করি।
স্থানীয় সফল দাস, আশ্বাব আলী শেখ, একরাম আলীসহ বেশ কয়েকজন মৎস্য চাষি জানান, এ এলাকার পানিতে অনেক লবণ। মূলত চিংড়ি চাষ করেই তাদের জীবন চলে। তেমন কোনো গাছপালা হয় না। কয়েকবছর ধরে চিংড়িতেও তেমন লাভ হচ্ছে না। ২০১৯ সালে জাকির ভাই সৌদির খেজুর লাগালে এলাকার লোকজন তাকে পাগল বলেছিল। কিন্তু এখন তারা বুঝতে পেরেছে ঘেরের পাড় উঁচু করে সৌদি খেজুর রোপণ করে নিজেকে সাবলম্বী করা সম্ভব।
সদর উপজেলার ঘের মালিক ও চাষি আলামিন খান সুমন বলেন, আইনজীবী জাকির ভাইয়ের ঘেরে ঘুরতে গিয়ে সৌদি খেজুরের চাষ দেখে আমার ঘেরেও কয়েকটি চারা রোপণ করেছি। চারাগুলো বড়ও হয়েছে। যদি ভালো ফলন পাই ভবিষ্যতে আরও চারা রোপণ করব।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সৌদি খেজুর মরুভূমির ফসল। দিহিদার জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি এ খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন। তবে খেজুরের স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদনের পরিমাণ ঠিক থাকবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তবে লবণাক্ত পানির এলাকার জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। সৌদি খেজুর চাষের এ উদ্যোগকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।