দেশে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার থেকে পুনরায় আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় শুধু কাতার এয়ারওয়েজকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক)। তবে এরই মধ্যে চারটি বিদেশি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট চালু করার অনুমতি চেয়ে বেবিচককে চিঠি দিয়েছে।
এয়ারলাইন্সগুলো হলো- তুরস্কের ‘তার্কিশ এয়ারলাইন্স’ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘ফ্লাই দুবাই’, ‘এমিরেটস’ ও ‘এয়ার অ্যারাবিয়া’।
বেবিচক সূত্রে জানা যায়, এই চারটি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে যাত্রী নিয়ে নিজ নিজ দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে ‘তার্কিশ এয়ারলাইন্স’ আগামী ১ জুলাই থেকে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়েছে। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের এয়ারলাইন্সগুলো অনুমতি পেলেই ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে।
জানা যায়, ‘তার্কিশ এয়ারলাইন্স’ বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে সরসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে। এছাড়া ‘ফ্লাই দুবাই’ ঢাকা-দুবাই, ‘এমিরেটস’ ঢাকা-দুবাই এবং ‘এয়ার অ্যারাবিয়া’ ঢাকা-শারজাহ রুটে সরসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর মধ্যে শুধু তুরস্ক ব্যতীত অন্য রুটগুলোতে ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’ও সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সবগুলো রুটেই বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের চারটি এয়ারলাইন্স পুনরায় ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে। এ বিষয়ে দুই দেশের সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গেই কথা বলেছেন তারা।
তিনি আরো বলেন, দুই দেশের সিভিল এভিয়েশনকেই বলা হয়েছে, তাদের এয়ারলাইন্সগুলো যদি বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে তাহলে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলোকেও সেই দেশে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। আশা করা যায় তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে এবং বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলোকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেবে।
কবে নাগাদ এয়ারলাইন্সগুলো অনুমতি পেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ ছিল। আজ মঙ্গলবার থেকে শুধু ‘কাতার এয়ারওয়েজ’কে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন এক সপ্তাহ এদের ফ্লাইট চালাচল পর্যবেক্ষণ করা হবে। তারপর পরিস্থিতি বুঝে ধাপে ধাপে অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলোকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে।
এ বিষয় ‘তার্কিশ এয়ারলাইন্সে’র বাংলাদেশের সেলস অ্যান্ড ট্রাফিক অফিসার এজাজ কাদরি বলেন, তুরস্কের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালাচলের অনুমতি দিয়েছে। পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থিত তার্কিশ দূতাবাসও দেশটিতে ভ্রমণের জন্য সবাইকে উৎসাহিত করছে। তাই ঢাকা-ইস্তাম্বুল ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়ে বেবিচকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে এবং পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে আগামী ১ জুলাই থেকে ‘তার্কিশ এয়ারলাইন্স’ ঢাকা-ইস্তাম্বুল রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে গত ২১ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাবল বন্ধ ঘোষণা করে বেবিচক। এরপর দীর্ঘ ৬৯ দিন বন্ধ থাকে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল। পরে গত ১ জুন থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ কয়েকটি রুটে যাত্রীবাহী বিমান চলাচলের অনুমতি দেয় বেবিচক। আর আজ মঙ্গলবার থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অুনমতি দেওয়া হয়।
তবে প্রাথমিকভাবে শুধু ‘কাতার এয়ারওয়েজ’কে ঢাকা-লন্ডন ও ঢাকা-কাতার রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যার অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার ভোরে কাতারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছে একটি ফ্লাইট। তবে কাতারে এখনো বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় যাত্রীরা শুধু ট্রানজিট হিসেবে দেশটির দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবেন।