পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি বলেছেন, সামগ্রিকভাবে ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে ভারতের প্রধান ব্যাণিজ্যক অংশীদারও বাংলাদেশ।
দুই দেশের অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানের প্রসঙ্গ টেনে মিস্টার আলম বলেন, অন্য অনেক প্রতিবেশীর মতো বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যেও অস্বস্তি রয়েছে। দুই দেশ এখন পর্যন্ত সম্পর্কের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি বাস্তবায়িত করতে পারেনি। স্থল ও সমুদ্রসীমার মতো সমস্যার সমাধান হলেও সীমান্তে বাংলাদেশের লোকজনের মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় অস্বস্তি হিসেবে রয়েছে। দুই দেশের যেকোনো পর্যায়ের আলোচনায় এটি আলোচ্যসূচির ওপরের দিকেই থাকে। অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিতর্কের আরেকটি বিষয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে পারস্পরিক ভুলগুলো কী কী, সেটা পর্যালোচনা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্পর্কের চ্যালেঞ্জগুলোর কথা স্বীকার করে এ নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর বিস মিলনায়তনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস-বিস) ওই সেমিনারের আয়োজন করে।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ভারতের বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের পরিচালক অরবিন্দ গুপ্ত বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে জটিলতা যেমন আছে, গভীরতাও আছে। সম্পর্কে ওঠানামা স্বাভাবিক, আমরা চাইলেই সেই বাস্তবতাকে বদলে দিতে পারি না। দুই দেশের মধ্যে অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য আছে। ঐকমত্য না হওয়াটা দোষের নয়, তবে অবশ্যই একে অন্যের স্বার্থের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। যে বিষয়গুলোতে জটিলতা বা সমস্যা রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এসব মোকাবিলা করেই সামনে এগোতে হবে। দুই প্রতিবেশির সম্পর্কে মিল এবং অমিল সত্ত্বেও যে গভীরতা এবং বৈচিত্র্য রয়েছে সেটাকে উদ্যাপন করতে হবে।
বিসের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান কূটনীতিক কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কের যে ধারা, সেটি বজায় রাখার স্বার্থে কিছু অনিষ্পন্ন বিষয়ের সমাধান করাটা জরুরি। এ সম্পর্ককে আরও উঁচুতে নেয়ার ব্যাপারে দুই পক্ষের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ ফেলো শ্রীরাধা দত্ত ও বিসের গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর। শ্রীরাধা বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো আরও বিকশিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে শুধু বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। অন্যান্য স্থল বন্দর দিয়েও বাণিজ্য বাড়ানো যেতে পারে।
কাজী ইমতিয়াজ হোসেনের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সম্মাননীয় ফেলো লে. জেনারেল (অব.) রবি কুমার সোহনি ও বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজের চেয়ারম্যান এ এস এম শামসুল আরেফিন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বিসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান।
আলোচনা পর্বের শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং অন্য অতিথিরা শ্রীরাধা দত্ত সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বোনহোমি অভ ৫০: ১৯৭১ অ্যান্ড প্রেজেন্ট’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।